সুনীপা চক্রবর্তী,ঝাড়গ্রাম: বিশুদ্ধাচারে যজ্ঞ, পূজার মাধ্যমে হয়ে গেল ঝাড়গ্রামের মৃত তিন হাতির শ্রাদ্ধানুষ্ঠান৷ গীতা, ভগবৎ পাঠ থেকে শুরু করে নাম সংকীর্তন – সবরকম আয়োজনই করা হয়েছিল। নিয়ম পালনে কোনও ঘাটতি রাখা হয়নি।রবিবার সকাল প্রায় ছ’টা থেকেই গ্রামে শুরু হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মৃত তিন হাতির আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম।
এদিন রবিবার বিনপুর থানার কাঁকো অঞ্চলে সাতবাঁকি গ্রামে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে তিনটি হাতির শ্রাদ্ধাদির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।পুরোহিত দিয়ে,মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে হয়েছে পূজা,যজ্ঞ৷ যাঁদের জমিতে হাতি তিনটির মৃত্যু হয়েছিল, তাঁরা দুই ভাই মুণ্ডিত মস্তকে কাজে বসেছিলেন।এছাড়াও কাঁকো অঞ্চলের এক গ্রামবাসী মস্তক মুন্ডন করে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে বসেছিলেন। শ্রাদ্ধ শেষে কাঁকো অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ এদিন বসে খিচুড়ি খান।সাতবাঁকি গ্রামের মানুষ তিন বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখেননি।
চলতি মাসেই কাঁকো অঞ্চলের সাঁতবাকি গ্রামে রাতে তিনটি হাতি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কয়েকমাস ধরে হাইটেনশন তারটি ঝুলছিল৷ সেই ছোঁয়াতে দুটি অন্তঃসত্ত্বা হাতিসহ তিনজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী বিদ্যুৎ দপ্তর৷ এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারেননি গ্রামবাসী। গ্রামবাসীরা নিজেরাই মাগন করে মানুষ জনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে আয়োজন করে ফেলেন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।আশেপাশের গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এদিন গ্রামে খিচুড়ি খেয়েছেন।এদিন সকাল সাড়ে ছটা থেকে শুরু হওয়া যজ্ঞ চলে বিকেল পর্যন্ত।ধীরেন মাহাতো,বীরেন মাহাতো মাথা ন্যাড়া করে কাজে বসেন। ভাড়াড়ু গ্রামের এক ব্যক্তিও ন্যাড়া হয়ে কাজে বসেছিলেন৷ সবমিলিয়ে, এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা ব্যস্ত ছিলেন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নিয়ে।তবে এদিন গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের দাবি থেকে সরছেন না৷ হাতির মূর্তি গ্রামে স্থাপিত না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন।
গ্রামের বাসিন্দা কমল মাহাতো,দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো,রসিক মাহাতো ,বুদ্ধদেব মাহাতোরা বলেন, “গ্রামবাসীরা এদিন প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে হাতি তিনটির আত্মার শান্তির জন্য হোম,যজ্ঞ করেছে। আমারা গ্রামবাসীরা দাবি করেছি, গ্রামে তিনটি হাতির মূর্তি বসিয়ে দিতে হবে।আমাদের দাবি না মানা হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।”
ছবি: প্রতীম মৈত্র৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.