ছবি: প্রতীকী
শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: এক বছরে মধ্যে সব শেষ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বাবা-মা র মৃত্যুর নীরব সাক্ষী স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েও। শোকে পাথর জলপাইগুড়ির কলেজ পাড়া।
চোখের সামনে বাবা ও মায়ের মৃত্যু দেখেছে মেয়েটি। তাঁর নীরবতা বুঝিয়ে দিয়েছিল মানসিক এক কঠিন অসুখে অসুস্থ সে। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ছিলেন পাড়া প্রতিবেশীরা। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চিকিৎসা শুরুর ১২ দিনের মাথায় শুক্রবার রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন জলপাইগুড়ি শহরের কলেজ পাড়ার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবতী অনিন্দিতা কর্মকার (৩২)। এক বছরের মাথায় একে-একে বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পর কার্যত একা হয়ে পড়া যুবতীর চিকিৎসার পর এবার শেষকৃত্যেও এগিয়ে এলেন পাড়া প্রতিবেশীরাই।
গত বছর ১৯ আগস্ট জলপাইগুড়ি শহরের কলেজ পাড়ার বাড়ি থেকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী অজিত কর্মকার (৮০) এর পচাগলা মৃত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়িতে স্ত্রী অঞ্জলি ও মেয়ে অনিন্দিতাকে নিয়ে থাকতেন অজিতবাবু। পুলিশের দাবি, সাতদিন আগেই মৃত্যু হয়েছিল অজিতবাবুর। কিন্তু ঘটনা চেপে বাড়িতে স্বাভাবিক দিন যাপন করছিলেন স্ত্রী অঞ্জলি ও মেয়ে অনিন্দিতা। বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। সন্দেহের আঙুল উঠেছিলো মা ও মেয়ের দিকে। পরে বোঝা যায় দুজনেই মানসিকভাবে অসুস্থ।
গত ৬ আগস্ট একইভাবে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অঞ্জলি কর্মকারের পচাগলা মৃতদেহ। এক্ষেত্রেও মায়ের মৃতদেহ আগলে নির্বিকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মেয়ে অনিন্দিতাকে। তবে এবার আর তাকে একা বাড়িতে না রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ছিলেন আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিলো অনিন্দিতার। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনজনই। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ রূপা বিশ্বাসের কথায়, মেয়েটি স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল। হয়তো বাকিরাও কমবেশি একই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসায় এই রোগে ভাল থাকা সম্ভব। প্রয়োজন সঠিক সময়ে চিকিৎসা।
আত্মীয় অমিত কর্মকার জানান, কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখত না। সকলকে সন্দেহ করতো। চিকিৎসার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। কিন্তু রাজি হয়নি কেউই। মায়ের মৃত্যুর পর খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়ে ছিল অনিন্দিতা। হাসপাতালে ভরতি করার পর একটা দানা পর্যন্ত দাঁতে কাটেনি। দু’দিন অন্তর জল খাচ্ছিলো। চিকিৎসকরা চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। কাউন্সিলর তারক নাথ দাস জানান, সকলেই চেয়েছিলেন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক অনিন্দিতা। কিন্তু তা আর হল কই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.