সোমনাথ পাল, বনগাঁ: পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও কেন চোরাপথে ভারতে ঢুকেছিলেন? বুধবার বনগাঁ মহকুমা আদালতের ফাস্ট-ট্র্যাক ওয়ান কোর্টের বিচারক বিনয় কুমার পাঠকের প্রশ্নে কুপোকাত হায়দরাবাদ বিস্ফোরণকাণ্ডের মূলচক্রী ধৃত লস্কর জঙ্গি শেখ নইম ওরফে শেখ সমির৷
এদিন একটি মামলায় ফের নইম ওরফে শেখ সমীরকে তোলা হয় বনগাঁ মহকুমা আদালতের ফাস্ট-ট্র্যাক ওয়ান কোর্টে৷ এদিন বিচারকের সামনে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে ধৃত জঙ্গি৷ উলটে বিচারকের প্রশ্নেই চূড়ান্ত অস্বস্তি পড়ে শেখ সমির৷ বিচারকের কাছে নিজের পরিবারের অসহায়তার কথা তুলে ধরে সহানুভূতি কোরানোর ও চেষ্টা করে অভিযুক্ত৷ সব শুনে বিচারক ধৃতকে আইনি সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি আগামী ১২ অক্টোবর ফের আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন৷ জবাবে, দিল্লির এক আইনজীবীকে বনগাঁ আদালতে আনানোরও প্রস্তাব দেয় অভিযুক্ত নইম৷
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের রিপোর্ট ও ৩১ জন সাক্ষীর বয়ানের ওপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যেই ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি শেখ সমীরের তিন সহযোগী শেখ আবদুল্লা ওরফে আলি, মহম্মদ ইউনুস ও মুজফফর আহমেদ রঠোরকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন বিচারক৷ সেই সময় ধৃত মাস্টার-মাইন্ড শেখ সমীর পলাতক থাকায় তাকে আদালতে হাজির করানো যায়নি৷ ২০০৭ সালে ভারত-বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে চার লস্কর জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে বিএসএফ৷ ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় জিলেটিন স্টিক, নাইট্রো গ্লিসারিনের মতো বিস্ফোরক ও ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মানচিত্র৷ গোয়েন্দারা জানতে পারে, ধৃতরা পাকিস্তানের লস্কর জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য৷ ধৃতরা করাচিতে ২১দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলেও পরে জানতে পারেন গোয়েন্দারা৷
[হনুমানের দোসর ‘পাগলা’ কুকুর, পুজোর মুখে আতঙ্ক সিউড়িতে]
এদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তানের করাচি ও একজন জম্মু ও কাশ্মীর এবং একজন হায়দরাবাদের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে৷ ধৃতরা ওই সময় পাকিস্তানে জেহাদি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতে ঢুকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে৷ পাকিস্তান থেকে একটি হোটেলে থাকার পর সেখান থেকে চোরা পথে ভারতে প্রবেশ করে কলকাতার মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটের একটি গোপন ডেরায় আশ্রয় নেয়৷ গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই চক্রের মূলপাণ্ডা পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শেখ নইম৷ এরই মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন ২০১৬ সালে অন্ধপ্রদেশ থেকে তিহার জেলে ফেরার সময় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় নইম৷ তাতেও বিচারপ্রক্রিয়া না থামিয়ে ২০১৭ সালে তিন অভিযুক্তকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারক৷ এরই মধ্যে পালিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় শেখ নইম৷ এই ঘটনা চলাকালীন উলটে সরকারের কাছে নইমের খোঁজ ও জবাব চেয়ে মুম্বই আদালতে মামলা করেন শেখ নইমের মা৷ এরই মধ্যে বহু কষ্টে নইমকে ধরতে সমর্থ হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ৷ ধৃতকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, লস্কর কমান্ডারের নির্দেশ মতো প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিল নইম৷ এরপরই দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে একটি মামলাও রুজু হয় নইমের বিরুদ্ধে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.