শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: পাঁচশো বছরের বেশি সময় ধরে ঘাটালে রয়েছে দুর্গা রূপী মা সিংহবাহিনীর মন্দির। ঐতিহ্যবাহী সেই মন্দিরের জমিই বেহাত। বিপাকে সেখানে বসবাসকারী সেবায়েতরা। জমি ফেরতের দাবি নিয়ে ঘাটালের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। তাতে এখনও পর্যন্ত কোনও লাভ হয়নি।
১৪৯০ সালে ঘাটালের কোন্নগর মৌজায় দুর্গারূপী মা সিংহবাহিনীর পুজো প্রচলন করেন সেই সময়কালের ধনী ব্যক্তি হরিহর কর্মকার। অষ্টধাতুর দেবীমূর্তি চতুর্ভুজা। কথিত আছে, জাতপাতের অসম্মানের হাত থেকে রেহাই পেতে হরিহরবাবু এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। নির্মাণ করেছিলেন বর্তমান মন্দির। হরিহরবাবুর নাতি জিতারাম কর্মকার এই মন্দিরের সংস্কার করতে গিয়ে বর্ধমান রাজ তেজচন্দ্র রায়ের রোষানলে পড়েন। জিতারামকে বন্দি করে নিয়ে যান তেজচন্দ্র। কথিত আছে, সেই রাতেই মা সিংহবাহিনীর কড়া স্বপ্নাদেশ পেয়ে জিতারামকে মুক্তি দেন রাজা তেজচন্দ্র। শুধু তাই নয়, রাজা জিতারামকে সিংহবাহিনীর নামে ৫০ বিঘা জমিও দান করেন । সময়ের তালে সেই জমি এখন ১৭ বিঘায় ঠেকেছে।
সিংহবাহিনীর মন্দিরের এই জমিরই একটি অংশ রয়েছে ঘাটালের গোবিন্দপুর মৌজায়। ২০১৭ সালে চার বিঘা জমি বেহাত হয়ে যায়। এতে মুষড়ে পড়েন জিতারামের বর্তমান উত্তরসূরিরা। জমি ফেরতের দাবিতে ঘাটাল ব্লক ভূমি দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভক্তিপদ কর্মকার, শক্তিপদ কর্মকার-সহ ১৬ জন সেবায়েত। আইন মোতাবেক সেই জমি ফেরতও পেয়ে যান সেবায়েতরা। কিন্তু সিংহবাহিনীর বাস্তু জমি আজও বেহাত হয়ে রয়েছে। এই বাস্তু জমিতেই রয়েছে মা সিংহবাহিনীর মন্দির ও আটচালা প্রাঙ্গণ।
সেবায়েতদের পক্ষে শক্তিপদ কর্মকার বলেন, “আমাদের অজান্তেই মায়ের কৃষিজমি ও বাস্তু জমি বেহাত হয়ে যায়। চক্রান্তের শিকার হয়েছিল আমরা। এক শরিক শ্যামপদ কর্মকার ভূমি দপ্তরের এক কর্মচারীকে হাত করে নিজের নামে করে নেয়। আমরা বাস্তুহারা হয়ে যাই। আমরা সেবায়েতরা আজও বাস্তুহারা। গত বছর কোনওরকমে মায়ের পুজো করেছি। মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। বাস্তু ফেরত না হলে মায়ের পুজো ও কীর্তি রক্ষা করা যাবে না। আমাদের দাবি পুজোর আগে ওই বাস্তু জমি মায়ের নামে ফিরে আসুক।” মামলার তদন্তকারী অফিসার মৃণালকান্তি দাস বলেন, “সিংহবাহিনীর বাস্তু জমি নিয়ে মামলার শুনানি হয়েছে গত ১৯ আগস্ট। তদন্ত চলছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.