Advertisement
Advertisement
Medinipur

স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মেটানো থেকে বাল্যবিবাহ রোধ, মেদিনীপুরে পথ দেখাচ্ছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্লাব’

প্রথমে গ্রামে একটি শিবমন্দির গড়ার লক্ষ্য নিয়েই ক্লাবের উৎপত্তি।

Lakshmir Bhandar club is helping to many problems in Medinipur

গ্রামের মহিলারা একজোট হয়ে গড়লেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্লাব’। মেদিনীপুর সদর ব্লকের সনকাডাঙা গ্রামে। ছবি– নিতাই রক্ষিত

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:December 3, 2024 2:44 pm
  • Updated:December 3, 2024 2:47 pm  

সম‌্যক খান, মেদিনীপুর: গোটা গ্রামকে পথ দেখাচ্ছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’! না, এটি সরাসরি কোনও প্রকল্পের বিষয় নয়। গ্রামের সামাজিক উন্নয়ন ও চেতনার প্রসার ঘটাতে একটি ক্লাব তৈরি করেছেন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের আবেগ থেকেই ক্লাবের নামকরণ করা হয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্লাব।’ আপন গতিতে এগিয়ে চলেছেন গ্রামের মহিলারা। কখনও তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন বাল‌্যবিবাহ রোধে, তো কখনও ভূমিকা নিচ্ছেন ঘর-সংসারের বিবাদ মেটাতে। সমাজ সংস্কার থেকে শুরু করে গ্রামীণ উন্নতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাঁদের লক্ষ‌্য। আর সেই পথে অগ্রসর হতেই সাহায‌্য করছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নামক সরকারি প্রকল্প। 

কারণ, বাড়ির পুরুষদের কাছে হাত না পেতে সেই প্রকল্পের অর্থ থেকেই গুটি গুটি পায়ে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছেন গ্রামের মহিলারা। নিঃশব্দ বিপ্লবের মতো এই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্লাব’ গড়ে উঠেছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সনকাডাঙা গ্রামে। নেই কোনও ক্লাবঘর। নেই ক্লাবের নামে সাইনবোর্ডও। কোনও মিটিং করতে হলে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবনটি-ই ভরসা। নয়তো কোনও সদস‌্যার ঘরেই আলোচনা সারেন তাঁরা। কিন্তু কাজ করে চলেছেন নিঃশব্দে। ক্লাবের বর্তমান সদস‌্য সংখ‌্যা প্রায় ৪০। প্রায় ৭০টি পরিবার বসবাস করে ওই গ্রামে। প্রায় প্রতি বাড়ি থেকে একজন করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রাপক মহিলাকে নিয়ে ওই ক্লাব গড়া হয়েছে। প্রথমে গ্রামে একটি শিবমন্দির গড়ার লক্ষ‌্য নিয়েই ক্লাবের উৎপত্তি।

Advertisement

ক্লাবের সম্পাদিকা পঞ্চাশোর্ধ নিয়তি গোয়ালার কথায়, ‘‘প্রতিবছর শিবরাত্রির সময় গ্রামের মহিলাদের পাশের গ্রামে পুজোর জন‌্য যেতে হত। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকত। তার পর আগে সেই গ্রামের মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হত। পরে তাঁরা সুযোগ পেতেন। তখনই তাঁরা গ্রামেই পৃথক কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন। এর পর মুখ‌্যমন্ত্রী যখন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার করে দেন, তারপরই বর্তমান ক্লাবের সভানেত্রী দোলা পাণ্ডে, কোষাধ‌্যক্ষ শিখা তেওয়ারি থেকে শুরু করে কয়েকজনের সঙ্গে নিজেদের অর্থ থেকে গ্রামেই শিবমন্দির গড়ার বিষয়ে আলোচনা করি। আমরা ঠিক করি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থ থেকেই শিবমন্দিরের প্রাথমিক কাজ শুরু করব। সেটাই সূচনা। শুরু হয় ক্লাব গঠনের প্রক্রিয়া। সবার মত নিয়ে নামকরণও করা হয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্লাব।’’

ক্লাবের বয়স বছর দেড়েক। ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার টাকা জমাও করে ফেলেছেন সদস্যরা। প্রতিমাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রাপ‌্য অর্থ থেকে ২০০-৩০০ টাকা ক্লাবের ফান্ডে চাঁদাও দেন মহিলারা। ইতিমধ্যে জমানো টাকায় মন্দির তৈরির জন‌্য ২ হাজার ইটও কিনে ফেলেছেন তাঁরা। আবার কেবলমাত্র মন্দির গড়ার কাজেই থেমে থাকেননি। গ্রামের মহিলাদের সমস‌্যা সমাধানেও অগ্রনী ভূমিকা নিচ্ছেন। বাল‌্যবিবাহ রোধ থেকে শুরু করে গ্রামের মধ্যে কোনও সংসারে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ ঘটলেও ডাক পড়ছে তাঁদের। সাংসারিক ঝামেলা মিটিয়েও ফেলছেন। এখনও পর্যন্ত গ্রামের মধ্যে তিনটি বাল‌্যবিবাহের ঘটনাও রুখে দিয়েছেন তাঁরা।

সম্পাদিকা নিয়তিদেবী জানান, ‘‘অনেক সময় গ্রামের কাউকে কিছু না জানিয়েই আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এরকম কিছু আঁচ পেলেই তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট নাবালিকার বাবা-মা তথা পরিবারকে বোঝাচ্ছেন। এভাবেই চলছে তাঁদের কাজকর্ম।’’ গ্রামের মহিলাদের এধরনের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন পুরুষরাও। স্থানীয় চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রাজেন গোয়ালার কথায়, ‘‘সমাজের উন্নতিতে বাড়ির মহিলারা এগিয়ে এলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়। উন্নয়নের কাজে গতি বাড়ে। সমাজ সংস্কারও করা সম্ভব। কোনও বাড়িতে নাবালিকার বিয়ের ব‌্যবস্থা হচ্ছে কি না এধরনের বাড়ির অভ‌্যন্তরের খবরাখবর সাধারণত মহিলা মহলেই বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে তা রোধ করা অনেকটাই সহজ হয়।’’ ওই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্লাব’কে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement