ধীমান রায়, কাটোয়া: স্বামী টোটো চালাতেন। কিন্তু বছর দেড়েক আগে দুর্ঘটনায় ডান হাত প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে সংসার টানতে নিজেই স্বামীর টোটো চালান পম্পা মণ্ডল। কাটোয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ডাকবাংলো রোডের বাসিন্দা তিনি। তবে পম্পাদেবী কোনও পুরুষকে তার টোটোয় চাপান না। শুধুমাত্র মহিলা যাত্রীদেরই ভাড়া নিয়ে যান।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টোটো চালানোর পাশাপাশি তার ফাঁকে সংসারের কাজকর্মও সারেন। প্রায় একবছর ধরে এভাবেই জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন পম্পাদেবী। কাটোয়ার ডাকবাংলো রোডের বাসিন্দা পম্পাদেবীর বাড়িতে রয়েছেন তার স্বামী তরুন মণ্ডল। এক মেয়ে সুস্মিতা কাটোয়া দুর্গাদাসী চৌধুরাণি বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পম্পাদেবী জানিয়েছেন, তার স্বামী তরুনবাবু টোটো চালাতেন। ২০১৮ সালে দুর্গাপুজোর নবমীর দিন টোটোটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। টোটো উলটে গিয়ে তরনবাবুর ডান হাত মারাত্মকভাবে জখম হয়। হাতের হাড় একাধিক জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে দীর্ঘদিন তরুনবাবুকে চিকিৎসার মধ্যেও বিশ্রামে থাকতে হয়। তারপর থেকে তার ডান হাত প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছে। সেজন্য আর টোটো চালাতেও পারেন না তরুণবাবু।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণবাবুর চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই রীতিমতো ধার-দেনা করে চিকিৎসার থরচ জোগাড় করতে হয়। সংসার চালানোও দুরূহ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে পম্পাদেবী নিজেই তার স্বামীর টোটো চালানো কয়েকদিনের মধ্যেই রপ্ত করে নিয়ে রাস্তায় নেমে পডেন।
পম্পাদেবী বলেন, “কখন কার কি ধরনের পরিস্থিতি আসবে তা কেউ বলতে পারেনা। আমার স্বামী দুর্ঘটনার শিকার। তাই তার স্ত্রী ও সন্তানের মা হিসাবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে সংসারের দায় সামলানোর।” রোজ সকাল ৬ টার মধ্যে টোটো নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন পম্পাদেবী। মাঝে একবার বাড়িতে গিয়ে রান্নার কাজও তাড়াতাড়ি সেরে নেন। তারপর দুটো থেকে আড়াইটে নাগাদ বাড়িতে খেতে যান। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফের বিকেল সাড়ে তিনটে-চারটের মধ্যে বেড়িয়ে পড়েন। তারপর রাত আটটা পর্যন্ত টোটো চালান।”
তবে মহিলা যাত্রী ছাড়া কোনও পুরুষকে তার টোটোয় ভাড়া নেন না পম্পাদেবী। তিনি বলেন, “হয়ত এটা নিয়ে কেউ সমালোচনা করবেন। তবে নিজের নিরাপত্তার কারনেই আমি পুরুষ যাত্রীদের চাপাতে চাইনা।”
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.