বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: “আমি তখন ট্রেনের ঠিক নিচে৷ বুঝতে পারছি, ট্রেনটা চলছে৷ বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। মাথা নিচু করে ঘাপটি মেরে বসে চোখ বুজে ইস্টনাম জপ করে চলেছি। এক চুলও নড়ার উপায় নেই। মাথা উচু করলেই শেষ। নিঃশ্বাস একপ্রকার বন্ধ করেই অপেক্ষা করছি৷ অবশেষে ট্রেনটা চলে গেল৷ আমার মাথার উপর চলন্ত ট্রেন। এটা অনুভব করতে পারলাম৷” নিছক গল্প নয়, এক মেয়ের অভিজ্ঞতা। যে মেয়ে ব্যস্ত থাকেন মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায়। অনন্তা বিশ্বাস। বছর বাইশ বয়স৷ মা আর দিদিমাকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাঁর পথচলা। বাবা থেকেও নেই-এর পর্যায়ে৷ যখন বয়স মাত্র আট কিংবা নয়, বাবা আর মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ মন থেকে বিষয়টি মানতে পারেননি তিনি৷ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তিনি, তাঁর মা এবং দিদিমা। তিনজনই যে মহিলা, মজবুত লড়াই করার ক্ষমতা কোথায় তাঁদের? তবুও দিন কাটতে থাকে৷ মায়ের কথায় ও দিদিমার আদর্শে নিজের মনটাকে শক্ত করে সে৷ নিতে থাকে লড়াইয়ের পাঠ। অনন্তা গ্র্যাজুয়েট৷ তিনি জানান, কোনওদিন এইরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হব তা ভাবিনি৷ আর ভাবতেও চাই না৷
বুধবার রাত প্রায় আটটা৷ তখন কৃষ্ণনগর স্টেশনের ২ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে ডাউন লেডিজ কৃষ্ণনগর লোকাল ছেড়ে যাচ্ছিল৷ আর ঠিক সেই সময়ই ঘটেছিল বিপদ৷ ঠিক কী ঘটেছিল সেই সময়? চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ফাঁক দিয়ে গলে ট্রেনের নিচে চলে যান অনন্তা। মা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ট্রেন ছেড়ে দেয়। মায়ের সামনেই এই ঘটনা। মেয়ের জীবনশঙ্কা। বাঁচবে নাকি চোখের সামনে মৃত্যু হবে মেয়ের? এই আতঙ্কে কান্নাকাটি ও দাপাদাপি শুরু করেন মা। স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তাঁরা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই মারা গিয়েছেন অনন্তা। জিআরপি তখন তাঁর মাকে ঘিরে রাখেন বিপদের আশঙ্কায়। এই পরিস্থিতিতে মেয়েটির মায়ের চিৎকারে ট্রেনের গতি কমান চালক। ধীরগতিতে চলতে থাকে ট্রেন৷ স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পরই ঘটল বিস্ময়৷ উঠে দাঁড়ালেন অনন্তা। গোটা ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব।
সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় মেয়েকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছে মেয়ে, এমনই বলছেন ওই মহিলা। কলকাতার শিশুমঙ্গল হাসপাতালের স্টাফ নার্স মেয়ে যে বেঁচে, তা প্রথমে বিশ্বাসও করতে পারছিলেন না মা সুচন্দ্রা বিশ্বাস৷ বিষয়টা অবিশ্বাস্য দিদিমা লতিকা সাহার কাছেও৷
ছবি: সুজিত মণ্ডল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.