রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: প্রতিপক্ষ আট ফুট লম্বা একটি অজগর। তাতে কী? উপস্থিত বুদ্ধি আর অসীম সাহসে ভর করে সেই ভয়ঙ্কর সরীসৃপকে কাবু করলেন গ্রামের আটপৌরে গৃহবধূ। মুরগি শিকার করতে এসে খাঁচাবন্দি হয়ে গেল শিকারি নিজেই। আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের ডাঙ্গির বাসিন্দা প্রমিলা দাস অজগরকে কাবু করে এখন গ্রামের নায়িকা। সুস্থ অবস্থায় অজগরটিকে উদ্ধার করেছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। প্রমিলাদেবীর সাহসের প্রশংসা করেছেন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা।
শুক্রবার সাতসকালে পুকুরি গ্রামের ডাঙ্গি এলাকায় কাশিয়া দাসের বাড়িতে ঢুকে পড়ে আট ফুট লম্বা এক অজগর। ঘরের বারান্দায় মুরগির খোপ রাখা ছিল। সেদিক দিয়েই ঘোরাঘুরি করছিল অজগরটি। বোঝাই যাচ্ছে, খাবার খুঁজতেই সে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। তার গতিবিধি দেখে তখন বাড়ির সকলের থরহরিকম্প দশা। দিন মজুর সুঠাম চেহারার কাশিয়াবাবুও তখন ভয়ে কাঁপছেন। বাড়ির ভিতরে রীতিমতো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে। বাড়ির একমাত্র ছেলে কমল অফিস চলে গিয়েছে। ফলে কী করি কী করি ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যান প্রমিলাদেবী। শুরু হয় তাঁর লড়াই।
খালি হাতে অজগরের ঘাড় চেপে ধরেন। অজগরও তাঁকে পেঁচিয়ে ধরতে উদ্যত হয়। কিন্তু প্রমিলাদেবীর কাছে পেরে ওঠেনি জঙ্গলের বিশালাকার সরীসৃপটি। সঙ্গে সঙ্গে মুরগির খাঁচাতেই তাকে বন্দি করে ফেলেন প্রমিলা দাস। শিকার করতে এসে সেই খাঁচাতেই আটকা পড়ে অজগর তখন চুপসে গেছে। তবে রাগে ফোঁসফোঁস করছিল।
খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কুমারগ্রাম রেঞ্জের বনকর্মীরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে গিয়ে অজগরটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ফের জঙ্গলে সাপটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “অনেক সময়েই আমরা দেখি, গ্রামে ঢুকলে মানুষের আক্রমণের শিকার হয় বন্যপ্রাণীরা। ক্ষতির আশঙ্কায় মানুষ নিরীহ বন্যপ্রাণের ক্ষতি করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু শুক্রবার কুমারগ্রামের গৃহবধূ যে নজির রাখলেন, তা প্রশংসনীয়। ওই মহিলাকে কুর্নিশ জানাই।” প্রমিলাদেবীর প্রতিবেশী দীপংকর ঘোষ ডুয়ার্স ফরেস্ট ভিলেজার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুমারগ্রাম ব্লকের সম্পাদক। তাঁর কথায়, “প্রমিলাদেবীকে কুর্নিশ না জানিয়ে পারছি না। খবর পেয়ে গিয়ে দেখি, কোনও ক্ষতি না করেই আটকে ফেলা হয়েছে অজগরককে। প্রমিলাদেবী বরাবরই খুব সাহসী ও উদ্যোগী মহিলা। তিনি সাপটিকে কাউকে আঘাতও করতে দেননি। একজন সাধারণ মহিলা বন্যপ্রাণ সম্পর্কে যে সচেতনতার নজির রাখলেন, তা প্রশংসার যোগ্য।”
তবে এই ঘটনাকে তেমন বড় করে দেখতে নারাজ প্রমিলাদেবী নিজে। তিনি বলছেন, “ জঙ্গলের কাছেই বাড়ি আমাদের। এইটুকু সাহস না থাকলে চলে? বাড়ির সকলে যখন ভয় পেয়েছিল, আমি তখন গিয়ে অজগরের ঘাড় চেপে ধরি। আর যাবে কোথায়? তেমন বেগড়বাই করতে পারে নি। তবে ওর তো কোন দোষ নেই। খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছিল। অনেকে সাপটাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি মারতে দিইনি।বনদপ্তরের কর্মীরা এসে সাপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।” সত্যি, প্রমিলাদেবীর এই ভূমিকা জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে নিদর্শন হয়ে উঠতেই পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.