বাবুল হক, মালদহ: বাঙালি বুঝলেই পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। স্রেফ এই আতঙ্কে উত্তরপ্রদেশ থেকে পালিয়ে ঘরে ফিরছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে প্রায় দেড়শো জন শ্রমিক ফিরে এসেছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। যাঁরা ফিরে আসছেন এখনও আতঙ্কগ্রস্ত তাঁরা।
হরিশ্চন্দ্রপুরের নাজির শেখ বলেন, “গ্রেপ্তার করে জেলে পুরতে চাইছে লখনউ পুলিশ। যার হোটেলে কাজ করছিলাম সেই হোটেলের মালিকও বলছিলেন ‘পালিয়ে যা, না হলে তোদের ধরে ফেলবে।’ সেই ভয়ে কোনওরকমে ট্রেন ধরে পালিয়ে এসেছি। আর কখনও কাজের সন্ধানে উত্তর প্রদেশ যাব না।” গত ১৯ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে লখনউ। সেই ঘটনার পর হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ছয় শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ধৃতদের পরিবারের দাবি, ওই শ্রমিকরা সেখানে হোটেলের কর্মচারি হিসাবে কাজ করছিলেন। পুলিশ তাঁদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে। ওই ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশ থেকে দলে দলে মালদহে ফিরে আসছেন দিনমজুররা। আর উত্তরপ্রদেশে কাজে যেতে চাইছেন না চাঁচোল মহাকুমার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২, রতুয়া ১ ও ২, চাঁচোল ১ ও ২ নম্বর ব্লকের শ্রমিকরা। পরিবারের লোকরাও চাইছেন, ঘরের ছেলে ঘরেই থাকুক।
লখনউ থেকে সদ্য ফিরে এসেছেন আজহার শেখ, নিজাম শেখ। তাঁরা বলেন, “হরিশ্চন্দ্রপুরের যে ছয়জন যুবককে গোলমালের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁরা নির্দোষ। আমরা একই সঙ্গে হোটেলে কাজ করতাম। গত মাসে যখন গোলমাল চলছিল, অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কৌতুহলবশত সেই গোলমাল দেখছিল। আর হঠাৎ করে পুলিশ এসে ওই ছয় যুবককে ধরে নিয়ে যায়।” নিজাম শেখ বলেন, “উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে নিজের বাংলায় ফিরে এসেছি। ওখানে কাজ করতে আর যাব না। গ্রামে থেকে চাষবাস করব।”
হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তাজমুল হোসেন বলেন, “উত্তরপ্রদেশের বিজেপির সরকার মিথ্যা মামলায় এলাকার ছয় যুবককে জেলে পুরে দিল। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি। অনেকেই মোটা টাকার লোভে উত্তরপ্রদেশে কাজে যেতেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারও শ্রমিকদের জন্য অনেক সরকারি সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছে। সেই প্রচার আমরা করছি। যার ফলে এখন ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে বহু শ্রমিকেরা ফিরেছেন। ওরা এখন বাংলাতেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।” সবমিলিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন যোগীরাজ্যে কর্মরত এরাজ্যের শ্রমিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.