Advertisement
Advertisement
উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের হাইটেনশন তার

হাইটেনশন তারের নিচে বহুতলের অনুমতি কেন, দুর্গাপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক মৃত্যুতে প্রশ্ন

দুর্গাপুর নগর নিগম এবং বিদ্যুৎ বিভাগ একে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলছে।

Labour dead by hightension wire,municipality and electric dept slams each other
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 1, 2019 6:34 pm
  • Updated:December 1, 2019 7:18 pm  

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে উচ্চ বিদ্যুৎবাহী তার। সবসময় ওই তারে বিদ্যুৎ সংবহনের শব্দেই বুকে কাঁপুনি ধরে। আর ওই তারের নিচে একের পর এক বহুতল আবাসন। বহু আবাসনেরই প্রায় ছাদ ছুঁয়ে চলে গেছে সেই তার। ছাদের উপর নির্মাণকাজ করতে গিয়ে তাই দুর্ঘটনা ঘটছে বারবার। দুর্গাপুর নগর নিগম দাবি করছে, ওই এলাকায় বহুতল তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয় না। কিন্তু ওই বেআইনি বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা যায় নিগমের ভাঁড়ারেই। দেওয়া হয় জলেরও সংযোগ। বিদ্যুৎ বিভাগের তরফে সংযোগও মেলে। হাইটেনশন তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজমিস্ত্রি সাইবুল শেখের মৃত্যুর পর হুঁশ ফিরল প্রশাসনের। এই বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে তৎপর হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দুর্গাপুর নগরনিগম ও রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম।
গত শুক্রবার দুর্গাপুরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্ত পল্লিতে ছাদের উপর নির্মাণ করতে গিয়ে লোহার রডের সঙ্গে ওই ১৩২ কিলো ভোল্ট বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ঝলসে যান দুই নির্মাণ শ্রমিক সাইবুল শেখ ও শেখ হাসমত। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সাইবুলের। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানেই চিকিৎসা চলছে অন্য জনের।

[ আরও পড়ুন : একটানা আট ঘণ্টায় ৩০১ জন রোগীর চিকিৎসা, নজির গড়লেন কাঁথির চিকিৎসক]

দুর্গাপুরের ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড দিয়েই এই ১৩২ কিলো ভোল্টের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন গেছে। এছাড়াও একটু কম ক্ষমতা সম্পন্ন হাই টেনশন লাইনও রয়েছে দুর্গাপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে। নিয়মানুযায়ী এই তারের নিচে বাড়ি নির্মাণ করা যায় না। নিয়ম মেনে দুর্গাপুর নগর নিগমও অনুমতি দেয় না। কিন্তু তারপরও রয়েছে বহু বাড়ি, কলোনি কিংবা পাড়া। বহুদিন আগে থেকেই রয়েছেন তাঁরা। বহু বাড়ি বিপজ্জনকভাবে ঝুঁকি নিয়ে একতলা থেকে দুই বা তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে বা হচ্ছে। আর সেই সম্প্রসারণের সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
নির্মাণ সামগ্রী ওই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তারে স্পর্শ করতেই ঝলসে যাচ্ছেন মানুষ। বাড়িতে লাগছে আগুন। গোটা এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগই বলি হচ্ছেন নিরীহ নির্মাণ কর্মীরা। একের পর এক এই ঘটনায় দায় কার? এই নিয়েই বর্তমানে সরব দুর্গাপুরের সচেতন মানুষ। নিগমের দাবি, তারা অনুমতি দেয় না। ফাঁকা জমি দেখিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্সের আবেদন করে তার উপর পেল্লাই বাড়ি হাঁকান জমি মালিকরা। কিন্তু জলের সংযোগ পায় কীভাবে? এই বিষয়ে দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি জানান, “হোল্ডিং ট্যাক্সে ছল চাতুরি করার পর জলের সংযোগও বেআইনিভাবেই নেয়। আমাদের এই অবৈধ নির্মাণ খতিয়ে দেখার মতো পরিকাঠামোও নেই। বিদ্যুৎ দপ্তরেরও দেখা উচিত। দুর্গাপুরে অনেকেই ভূগর্ভস্থ তেল বা গ্যাসের পাইপ লাইনের উপর বাড়ি করে বাস করছেন বহুদিন ধরে। এই সবও বেআইনি। কিন্তু সব বেআইনি জিনিস একা নিগমের ধরা সম্ভব নয়।” দিলীপবাবু আরও জানান,“বারবার এই ধরনের দুর্ঘটনার পর আমি নিগমকে একটা তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। একটা নির্দিষ্ট উচ্চতর পর সমস্ত নির্মাণ ভেঙে দেবে নিগম।”

Advertisement

[ আরও পড়ুন : রাস্তায় ভিড় করা গরুর ঠাঁই খোঁয়াড়ে, পুরসভার সিদ্ধান্তে লক্ষ্মীলাভ খোঁয়াড় মালিকের]

এ তো গেল নিগমের সাফাই। কিন্তু উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তারের নিচে বেআইনি ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ দেয় কীভাবে বিদ্যুৎ দপ্তর? এই ব্যাপারে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের দুর্গাপুরের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুমন্ত রায় জানান, “ঘরে বাস করলে ও সঠিক পরিচয় পত্র থাকলেই সেই ব্যক্তি সংযোগ পেতে পারে। আমরা অন্যান্য অনুমতি কিংবা প্ল্যান দেখিননা। একতলা বাড়ি করেই অধিকাংশ সংযোগের আবেদন করে। তাই সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ফের নতুন করে অনুমতির দরকার পড়ে না।” কিন্তু দফায় দফায় এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পর এবার বিদ্যুৎ দপ্তরও সতর্ক হচ্ছে। সুমন্তবাবু জানান, “এই ধরনের ক্ষেত্রে সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে উচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।”

ছবি: উদয়ন গুহরায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement