সৈকত মাইতি, তমলুক: আসছে ২০২৬। আরও এক বিধানসভা নির্বাচন এরাজ্যে। যে নির্বাচনে ২৫০ আসন টার্গেট করে লড়বে তৃণমূল। আর সেই ২৫০ আসনেই জয় নিশ্চিত। বিরোধীদের হাজারও কুৎসা উড়িয়ে রাজ্যে চতুর্থবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হবে মা-মাটি-মানুষের সরকার। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার মাইসোরায় শ্যামসুন্দরপুর পাটনা হাইস্কুলে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে এভাবেই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা মিডিয়া কমিটির অন্যতম সদস্য কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “সবেমাত্র তিনবারের মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলায়। ’২৬ আসছে। ২৫০ আসনের টার্গেট করে তৃণমূল লড়বে। দিল্লির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ২৯৪টি আসনেই চোখে চোখ রেখে লড়াই হবে সিপিএম-বিজেপির কুৎসার বিরুদ্ধে। চতুর্থবারের মতো শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই কর্মীদের তৈরি হতে হবে।”
বিজয়া সম্মিলনীর এই মঞ্চ থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আত্মপ্রত্যয়ী কুণাল ঘোষের বার্তা, “সবে তো তিনবারের মা-মাটি-মানুষ সরকার বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজ্যজুড়ে সর্বস্তরে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের সুফল মানুষ পেয়ে চলেছেন। কোলাঘাট, পাঁশকুড়াতেও অনেকাংশে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বাকি আরও উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” এর পরিপ্রেক্ষিতেই কুণাল বলেন, “এর মধ্যে দেখা গিয়েছে, ধর্ষণের মতো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনওই ধর্ষণ, খুন, অত্যাচারের পক্ষে নই। কলকাতায় তিলোত্তমার ন্যায়বিচারের পক্ষে আমরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর দাবি তুলেছি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে মূল অভিযুক্ত। কিন্তু তার পরও বিরোধীরা সোচ্চার হয়েছে। তাদের দাবিমতো পূর্ণাঙ্গ ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। তখন তো এখন তাদের হাতেই। কিন্তু তার পরেও লাগাতার মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। যদি কোথাও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে আমরা তার অবশ্যই বিচারের দাবি জানাই।”
এই আর জি কর ইস্যুতে সরাসরি বিরোধী সিপিএম আর বিজেপিকে একহাত নেন কুণাল। বলেন, “শুধু তিলোত্তমা নয়। বানতলা থেকে ধানতলা, হাথরাস থেকে উন্নাও – সর্বত্র ন্যায়বিচার হোক। কিন্তু বিরোধীরা শুধুমাত্র কুৎসা, অপপ্রচার চালাতে আন্দোলনের জিগির তুলেছে। যে বিজেপির রাজ্যে নারী নির্যাতন শীর্ষে এখন তারাই বাংলায় এসে সাধুপুরুষ সেজেছে। পুজোর আগে যখন চারিদিকে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে প্রকৃতি যখন রুষ্ট আর ডিভিসি যখন জল ছেড়ে প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে, তখন প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গোটা তৃণমূল পরিবার মানুষের পাশে থেকেছে। এই কাজে দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে আমি সেলাম জানাই।”
কুণাল ঘোষ ছাড়াও এদিন বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজিত রায়-সহ স্থানীয় নেতৃত্ব। কুণালের নেতৃত্বে কোলাঘাটেও একটি বিজয়া সম্মিলনী হয়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, “কেন্দ্র সরকার যে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করেছে, সেটা কিন্তু বাংলাকে দয়া করেনি। আসলে বাংলা ভাষা যে ধ্রুপদী ভাষা, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার বহু আগেই তথ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করে এসেছে। তার প্রেক্ষিতেই বাংলা আজ অনুমোদন পেয়েছে ধ্রুপদী ভাষার। ফলে এটা আমাদের অধিকার, এটা আমাদের প্রাপ্য।” এ প্রসঙ্গে বিজেপির প্রতি আক্রমণাত্মক সুরে তিনি বলেন, “বিজেপি যেন কোনওভাবেই মনে না করে যে, এই সমস্ত অনুমোদন ওদের কোনও পারিবারিক সম্পত্তি। এটা দয়া করে দিচ্ছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.