পলাশ পাত্র, তেহট্ট: ইতিহাস বিজড়িত হেরিটেজ ভবন৷ অথচ তার আড়ালেই অসামাজিক কাজকর্ম৷ সম্প্রতি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব সেন, রামতনু লাহিড়ীর পদধূলিপ্রাপ্ত কৃষ্ণনগরের ব্রাহ্ম সমাজের হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত ভবন ঘিরে এলাকাবাসীর ক্ষোভের শেষ ছিল না৷ সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হলেও, একাধিক বিতর্ক দেখা দেয়৷ নিয়ম কিছুটা ভেঙেই কৃষ্ণনগর পুরসভা ভবন সংস্কারে কিছুটা কাজ করে৷ তাতেই নতুন করে শুরু হয়েছে ব্রহ্ম উপাসনা৷
একশো ছিয়াত্তর বছর পেরিয়ে যাওয়া ব্রাহ্ম সমাজের তৃতীয় প্রতিষ্ঠিত ভবনটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয় ২০১১ সালে। সম্প্রতি ভবনের বেহাল দশা কৃষ্ণনগরবাসীর চোখে পড়ছিল৷ জরাজীর্ণ ভবনের প্রাঙ্গণের গাছ কাটা, ভাঙা প্রাচীর৷ ছাদ ভেঙে পড়েছে, খসে পড়েছে প্লাস্টার। দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়েছে একাধিক গাছ৷চারপাশে দুর্গন্ধ, অপরিষ্কার। অসামাজিক লোকজনের আনাগোনাও আছে। এসব দেখে স্থানীয় মানুষজন ভবনটি সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন৷ হেরিটেজ কমিটি চিঠি লিখে অবিলম্বে সংস্কারের কাজে হাত দেওয়ার নির্দেশ দেয়৷ সেইমতো কৃষ্ণনগর পুরসভার তরফে সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়৷ প্রাথমিকভাবে জঞ্জাল সাফ করে, গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয় উন্মুক্ত চত্বর৷
ব্রাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমরা সংস্কার করব বলে ওখানে যাই।সেই খবর পেয়ে পুরসভা কাজে নামে৷ দেখি, ১৩ কাঠা জমির উপর তৈরি হওয়া হেরিটেজ ভবনের সামনে উঁচু প্রাচীর ভাঙা৷ এমনকী গোটা পনেরো আম, নিম, কাঁঠাল গাছও কাটা। পুরসভা এটা কীভাবে করল, তা ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি৷ এটা তো ধর্মীয় ভাবাবেগ আঘাত।সংস্কারের নামে ঐতিহ্যবাহী ভবনে এমনটা করা যায় না৷ আমরা জেলাশাসক, মহকুমাশাসকের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি।’ অন্যদিকে, এঘটনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগর পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, ‘হেরিটেজ কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার পর আমরা ওখানে কাজে হাত দিই। দীর্ঘদিন ওনাদের কোনও পাত্তা ছিল না। ঝোপঝাড়ে ভরতি ছিল জায়গাটা। সেসব কেটে আমরা পরিষ্কার করে দিই৷ তারপর ওনারা উপাসনা করতে পেরেছেন।’ ঘটনা প্রসঙ্গে পুরসভার বর্তমান প্রশাসক তথা সদর মহকুমাশাসক অম্লান তালুকদার বলেন, ‘এ নিয়ে সেসময় পুরসভার কাছে একটা রিপোর্ট চেয়েছিলাম। আর ওনারা যখন এসেছিলেন,তখনই আমি বলেছিলাম – কৃষ্ণনগর হেরিটেজের শহর। সুতরাং এর সম্মান রক্ষা করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভোটের পর সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শনিবার ঐতিহ্য ও স্মৃতিবিজড়িত ব্রাহ্ম সমাজ ভবনে যান কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুরের সম্পাদক তপোব্রত ব্রহ্মচারী-সহ কয়েকশো সদস্য৷ প্যান্ডেল করে বৈকালি দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান৷ উদ্বোধন পূর্বপুরুষ তর্পণ, নিবেদন প্রার্থনার মাধ্যমে সারাদিন ব্রহ্ম উপাসনা হয়। মাঝেমধ্যে ব্রাহ্ম সঙ্গীতও পরিবেশিত হয়। সদস্যরা জানাচ্ছেন, এই অনুষ্ঠান একটা ভূমিকা মাত্র৷ এরপর তাঁরা ভবন সংস্কারের কাজে হাত দেবেন৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব সেন, রামতনু লাহিড়ির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের পদধূলিপ্রাপ্ত ওই ভবন ফের সরগরম হয়ে ওঠায় খুশি শহরের নাগরিকরা৷ ফের ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেয়েছে কৃষ্ণনগর, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.