ফাইল ছবি।
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: কেএলও (KLO) সুপ্রিমো জীবন সিংহ আত্মসমর্পণের পর থেকে শান্তি বৈঠক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা চলছেই। আর তার জেরে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিপাকে উত্তরের বিজেপি নেতৃত্ব।
জীবন সিংহর সঙ্গে ভারত সরকারের শান্তি আলোচনা নিয়ে ধোঁয়াশা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে উত্তরের রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকায় চড়ছে ক্ষোভের পারদ। আস্থা হারিয়ে কামতাপুরি রাজ্য ও ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিজেপিকে ‘সুবিধাবাদী’ বলতেও ছাড়ছেন না। শান্তি আলোচনা দ্রুত শেষ করার দাবিতে ১৮ ডিসেম্বর জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন আত্মসমর্পণকারী কেএলও-রা। এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর উত্তরের প্রতি জেলায় বিক্ষোভ দেখায় কামতাপুর পিপলস পার্টি (কেপিপি)। ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ ‘ইউনাইটেড ফোরাম ফর সেপারেট স্টেট’। ওই সংগঠনে রয়েছে কামতাপুর পিপলস পার্টি, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন, বীর বিরসা মুন্ডা ইল উলগান, ভূমিপুত্র কো-অর্ডিনেশন পার্টি, ব্রহ্মপুত্র ইউনাইটেড পার্টি এবং বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। প্রত্যেকেই চাইছেন কোন শর্তে জীবন সিংহকে আআত্মসমর্পণ করানো হয়েছে সেটা প্রকাশ্যে আনুক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং দ্রুত শান্তি বৈঠকের ব্যবস্থা হোক।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এভাবে সুর যত চড়া হচ্ছে ততই চাপ বাড়ছে গেরুয়া শিবিরে। বিশেষত তাদের রাজবংশী কর্মী সমর্থকরা মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরনো বিজেপি নেতা বলেন, “ওই ঘটনা নিয়ে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলায় দলের অন্দরেও ক্ষোভ বাড়ছে। এভাবে একটি বিষয় ঝুলিয়ে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে চাইছে সেটা স্পষ্ট নয়। তাই আমরা কিছুই বলতে পারছি না।”
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) সুপ্রিমো জীবন সিংহ ছ’জন অনুগামীকে নিয়ে নাগাল্যান্ডের মন জেলার মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নয়াবস্তি এলাকায় আত্মসমর্পণ করেন। ২০০৩ সালে ভুটান পাহাড়ে ‘অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট’-এর পর দু’দশক কখনও বাংলাদেশ, কখনও মায়ানমারের জঙ্গলে কাটিয়েছেন তিনি। তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শান্তি বৈঠকের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সরকারিভাবে ওই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
কেপিপি নেতৃত্বের অভিযোগ, শান্তি বৈঠকের নামে টালবাহানা করে অযথা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। সমস্যার সমাধান না-করে অযথা ঝুলিয়ে রেখে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের আগে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিখিল রায় বলেন, “এটা চলতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার যেমন কামতাপুরি আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না একইভাবে জীবন সিংহের সঙ্গে শান্তি বৈঠকের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে।” কেপিপি নেতৃত্বের অভিযোগ, কামতাপুর রাজ্য ও ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে কয়েক দশক থেকে আন্দোলন চলছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিষয়ে আলোচনার কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিজেপিও নীরব। অথচ লোকসভা ভোট এলেই প্রলোভন দেওয়া হয়।
এদিকে আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, জীবন সিংহের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি বৈঠকের অনেক কথা বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা গিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার চুপচাপ। বৈঠক কবে কোথায় হবে সেটা কেন স্পষ্ট করে জানানো হচ্ছে না? অনুগামীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের একটি দল অসমে গিয়ে জীবন সিংহের সঙ্গে দেখা করে সংবর্ধনা দিয়েছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি রাজনীতির মূল স্রোতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সেটা আদৌ হবে কিনা সেটা নিয়ে এখন সংশয় চরমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.