সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: উমা বিদায়ের শোক ভুলে এবার লক্ষ্মীদেবীর আরাধনায় মাততে চলেছে গোটা রাজ্য৷ পিছিয়ে নেয় অন্ডালও৷ লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে কোলিয়ারি এলাকায় উৎসবের মেজাজ৷ শারদীয়া নয়, বছরভর সিংহ বাড়ীর লক্ষ্মীপুজোর অপেক্ষায় থাকেন খাঁদরা গ্রামের বাসিন্দারা৷ আড়াই দিনের এই পারিবারিক লক্ষ্মী পুজোই এখন সার্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে৷
মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে অন্ডালের খাঁদরায় আসেন সুধাকৃষ্ণ সিংহ৷ কথিত আছে, কায়স্থদের মূল জন্মস্থল কান্দি৷ সেখান থেকেই অধিকাংশ কায়স্থ সম্প্রদায়ের মানুষ পরবর্তীকালে ছড়িয়ে পড়েন রাজ্য ও দেশের অন্যত্র৷ একইভাবে সুধাকৃষ্ণবাবুও চলে আসেন অণ্ডালের খাঁদরায়৷ তখন গ্রামে তেমন জনবসতি ছিল না৷ পুরো এলাকাটিই ছিল জঙ্গলে ঢাকা৷ জঙ্গল সাফ করে গ্রামটিকে বসবাসের যোগ্য করে তোলেন সুধাকৃষ্ণবাবুই৷ তৈরি হয় কোম্পানি আমলের কোলিয়ারি৷ কোলিয়ারিতে কাজের সূত্রে গ্রামেও বসতি বাড়ে৷ সিংহ পরিবারের সদস্যদের দাবি, এক রাতে সুধাকৃষ্ণ সিংহকে স্বপ্নাদেশ দেয় স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী৷ দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার নির্দেশ দেন৷ সেই থেকে খাঁদরা গ্রামের সিংহ পরিবারে লক্ষ্মীপুজো হচ্ছে৷ সমৃদ্ধির দেবী সিংহ পরিবারের কুলদেবতাও বটে৷ দেবী নিত্য পুজিতা হন৷ তবে কোজগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন ঘটা করে পুজো হয়, ভোগ নিবেদন করা হয়৷ আড়াই দিন ধরে চলে পুজো-অর্চনা৷
[৭০০ জন বৃদ্ধার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বিজয়া সারলেন বিধায়ক]
আড়াই দিনের মাথায় ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়৷ শুধু খাঁদরা নয়, পাশের গ্রামের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সমাগম ঘটে এই সিংহ বাড়িতে৷ বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আরাধনা করা হয়, কিন্তু খাঁদরা গ্রামে একমাত্র সিংহ বাড়িতেই এই পুজো হয়৷ তাই সিংহ বাড়ির লক্ষ্মী পুজো আক্ষরিক অর্থেই এলাকার সার্বজনীন লক্ষ্মী পুজোর রূপ নিযেছে৷ এই লক্ষ্মী প্রতিমাও আলাদা৷ মায়ের বাহন পেঁচার বদলে দু’পাশে দুটি পরি থাকে৷ পুজোকে কেন্দ্র করে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয় সিংহ বাড়ির তরফে৷ পুজোর আড়াই দিন দুর্গা বিদায়ের শোক ভুলে যায় খাঁদরার বাসিন্দারা৷ উলটে লক্ষ্মী পুজোর পরই মনকষ্টে ভোগেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ শুরু হয় আগামী বছরের অপেক্ষা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.