অভিরূপ দাস : জলপাই উর্দি নেই পরনে। সামর্থ্য নেই উড়োজাহাজের টিকিট কাটার। অগত্যা ছেঁড়া লুঙ্গি পরে সাইকেল রিকশার প্যাডেলে পা। গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন থেকে রামগড়, রোজকার এই রুট সাময়িক পাল্টে নিয়ে রিকশা চড়েই পাকিস্তানে পাড়ি দিতে চলেছেন গড়িয়ার সত্যেন দাস। যুদ্ধ যুদ্ধ আবহের মাঝে শান্তির বার্তা দিতেই পেরোবেন ২০৭৭ কিলোমিটার। যেতে যেতে জনতাকে বলে যাবেন, “যুদ্ধ হোক খেলার মাঠে। ব্যাট-বল নিয়ে। সীমান্তে কামান-বন্দুক নিয়ে নয়।”
কলকাতা থেকে লাহোর, সাইকেল রিকশায় এহেন স্বপ্নসফরের পরিকল্পনা সাধারণ মানুষকে চমকে দিলেও সত্যেনের কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগেও রিকশা নিয়ে লাদাখ গিয়েছেন তিনি। তবে পুলওয়ামার ঘটনার পর সত্যেনের টার্গেট পাকিস্তান। রোজ সকালে ছাতু জল খেয়ে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়া। চম্পাহাটির সত্যেন আপাতত ভাড়া থাকেন গড়িয়ায় টালির চালের একটা ঘরে। হঠাৎ শত্রুদেশে পাড়ি কেন ? পাকিস্তানকে শত্রু বলতে নারাজ সত্যেন। বরং বলছেন, “জানি পুলওয়ামার ঘটনায় দেশের বীর জওয়ান প্রাণ হারিয়েছে। টিভিতে, খবরের কাগজে দেখছি দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। কিন্তু এতে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের দোষ কোথায়?” বরং তাঁর পাল্টা জবাব, “জঙ্গি সংগঠনগুলো একের পর সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ধর্ম হয় না। তারা মানবতার শত্রু। আমি মনে করি পাকিস্তানেও আমার মতো প্রচুর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছে। তারা যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ হলে তো সাধারণ মানুষের ক্ষতি। তাই পাকিস্তানে গিয়ে শান্তির বার্তা দিতে চাই আমি।”
স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে বেঁচে রয়েছেন। হোক না রোজকার দিন আনি দিন খাই জীবন। তবু সত্যেন চান দু’দেশের লড়াইটা এবার শেষ হোক। দেশের উত্তাল পরিস্থিতি ভাবিয়েছে তাঁকে। আর সেই ভাবনার তাগিদেই পাকিস্তান যাত্রা।
রিকশা নিয়ে তাঁর বেরিয়ে পড়া শুরু উনিশশো তিরানব্বই সাল থেকে। সেবার সাইকেলে ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। এরপর স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে রিকশায় করে পুরী যাত্রা। রিকশা চেপেই গিয়েছেন কাশ্মীর, বৈষ্ণোদেবীতেও। পথে যাঁকেই পেয়েছেন তাঁর কাছেই পৌঁছে দিয়েছেন শান্তির বার্তা। রিকশা চালিয়ে হাতেগোনা উপার্জন। এতটা পথ পাড়ি দিলেন কীভাবে ? সত্যেন জানিয়েছেন,সব সময় পাশে থেকেছে পাড়ার একটি ক্লাব। নাকতলা অগ্রণী ক্লাবের সুদীপ্ত সেনগুপ্ত, পার্থ দে-র মতো ক্লাব সদস্যদের সাহায্য ছাড়া যে এই যাত্রা সম্ভব ছিল না তা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন সত্যেন। চম্পাহাটির বন্ধু প্রসেনজিৎ মিস্ত্রী, নাকতলা আর রামগড়ের বাসিন্দারাও তাঁকে অকাতরে দান করেন। সত্যেনের পাশে থাকা এলাকার সেই সাধারণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “সামান্য রিকশাচালক হয়েও সে বুঝতে পেরেছে যুদ্ধ নয় সম্প্রীতিই পারে দু’দেশের বন্ধনকে দৃঢ় করতে। তাঁকে সাহায্য করাটা আমাদের কর্তব্য।” স্থানীয় নাকতলা অগ্রদূত সংঘ, জুনিয়র মোহনবাগান ক্লাব, চম্পাহাটির মুক্ত সংঘ, কালিকাপুরের নাট্য সংস্থা ‘উন্মেষ’-ও বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত। আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরেই প্যাডেলে চাপ পড়বে। লাহোর যাত্রার জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.