সোমনাথ পাল, বনগাঁ: ইচ্ছা ছিল সব বাধা টপকে প্রেমিকের কাছে পৌঁছে যাওয়ার। যে জেদে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে ছিল বছর ষোলোর নাবালিকা। কিন্তু ঘটনাচক্রে যে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হতে হবে, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি সে।
ঝাড়খণ্ডে নিজের প্রেমিকের কাছে যাবে বলে পরিবারের সদস্যদের কিচ্ছুটি না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা হাওড়া স্টেশন পৌঁছে গিয়েছিল বনগাঁ থানার নতুন গ্রাম এলাকার নাবালিকা। হাওড়া থেকে ঝাড়খণ্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেমিকের কাছে অনুনয়-বিনয়ও করেছিল সে। কিন্তু ভিনদেশি প্রেমিক তার আকুতিতে সাড়া দেয়নি। বরং সে প্রেমিকাকে জানিয়েছিল, ঝাড়খণ্ডে না এসে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে৷ কিন্তু মন যে মানে না। মনস্থির করেই ফেলেছিল আর বাড়ি ফিরবে না। যে কোনও উপায়ে সে পৌঁছবে প্রেমিকের কাছে৷ কিন্তু এই সংকল্পই কাল হল। ঝাড়খণ্ড পৌঁছানোর জন্য একজনকে খুঁজছিল সে। যে তাকে প্রেমিকের কাছে পৌঁছে দেবে। আর তখনই বন্ধু বেশে তার কাছে হাজির হয় নারীপাচারকারী গুলজার হোসেন ওরফে সেলিম।
ওই নাবালিকাকে তার প্রেমিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেলিম মুহূর্তের মধ্যে আলাপচারিতা বাড়িয়ে ভাব জমিয়ে নেয়। এরপরই গত ১১ই এপ্রিল সেলিম ওই নাবালিকাকে নিয়ে চলে যায় শিয়ালদহ স্টেশন লাগোয়া নীলরতন হাসপাতাল সংলগ্ন তার গোপন ডেরায়। আর ওই গোপন ডেরায় বসেই গুজরাটের কোনও এক পতিতাপল্লিতে ওই নাবালিকাকে বিক্রি আর পাচারের ছক কষতে থাকে সেলিম। প্রথমটা হকচকিয়ে গেলেও মাত্র দু-এক দিনের মধ্যেই বন্ধু-বেশী নারী পাচারকারী সেলিমের আসল মতলবটা বুঝতে পারে নাবালিকা। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ওই কিশোরী সেখানকার মুটের কাজে কর্মরত আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে সব ঘটনা খুলে বলে৷ সব শুনে আহমেদই নাবালিকাকে সেলিমের গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার করে সোজা চলে যায় বনগাঁ থানায়৷ আহমেদকে সঙ্গে করে সেলিমের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে বনগাঁ থানার পুলিশ৷
অবশেষে মঙ্গলবার সকালে হাওড়া স্টেশন চত্ত্বর থেকে অভিযুক্ত সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশি জেরায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেয় অভিযুক্ত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সেলিম মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। রাজমিস্ত্রীর কাজের নাম করে এসে সে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় পকেটমারি করত। বেশ কিছু দিন ধরে নারীপাচারের কারবারে হাত পাকিয়ে ছিল সে। এছাড়াও বিভিন্ন অসামাজিক কাজেও যোগ রয়েছে তার৷ বুধবার ধৃতকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলার কথা৷ অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতেই নিতে পারে পুলিশ৷ ধৃতকে জেরা করে ওই পাচার চক্রের আরও পাণ্ডাদের খোঁজ মিলবে বলে অনুমান পুলিশের৷ ওই নাবালিকাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.