সুমন করাতি, হুগলি: স্থান মাহাত্ম্য গড়ে ওঠে ঐতিহ্যের জোরে। ঝলমল সভ্যতা তাকে আড়ালে রাখতে চায় বটে, তবু বহু ইতিহাসের সাক্ষীকে অস্বীকার করা কঠিন। যেমন, হুগলি (Hooghly) জেলার চুঁচুড়া শহরের শতকপ্রাচীন দম দেওয়া ঘড়ি। যা আজও ঘণ্টা ও মিনিটের কাঁটায় সময়ের দিক নির্দেশ করে চলেছে। যে ঘড়ির জন্য কালে কালে স্থানটির নাম হয়ে উঠেছে ‘ঘড়ির মোড়’। যা হুগলিবাসীর অন্যতম গৌরব।
বাংলার অন্যতম প্রাচীন সদর শহর চুঁচুড়া। তারই প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে ১০৯ বছরের পুরনো ঘড়ি। তার সম্মক পরিচয়ের জন্য ফিরতে হবে ফ্ল্যাশব্যাকে। তখন দোর্দাণ্ডপ্রতাপ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। দুনিয়ার সব প্রান্তে তাদের শাসন। ১৯০১ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত ছিল বড়লাট সপ্তম এডওয়ার্ড-এর শাসনকাল। তাঁর স্মৃতিতে ১৯১৪ সালে এই ঘড়ি বসানো হয় চুঁচুড়া শহরে। সেই সময় অবশ্য এই অঞ্চলের নাম ছিল টাউন গার্ড রোড ঝাউতলা। কালের চক্রে, মানুষের ভালবাসায় সেই এলাকাই এখন ‘ঘড়ির মোড়’। আজ যেখানে বাস-অটো-টোটোর রমরমা, সেকালে এই ঘড়িতলায়, এই রাস্তায় চলত ফিটন।
মোড়ের মাথায় ১৬ স্কোয়ার ফুট জায়গায় ৩০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে ঘড়িটি। ঢালাই লোহার স্তম্ভের উপর চারদিকে চারটি ডায়াল ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির। মূল যন্ত্রাংশ পিতল ও ইস্পাতের। প্রতি আধঘণ্টা অন্তর তার ঢং ঢং আওয়াজ শুনে আজও নিজেদের হাতের ঘড়িটি মিলিয়ে নেন স্থানীয় মানুষ। ১০৯ বছরে একবারই বিগরেছিল ‘ঠুকুরদা’ ঘড়ি। ২০০৯ সালের আয়লা ঝড়ের তাণ্ডবে দিন পনেরো থমকে ছিল ঘড়ির কাঁটা। মেরামতির পর ফের অব্যাহত সময়ের যাত্রা।
ব্রিটিশ আমলে ঘড়ি মেরামতির দায়িত্বে ছিল সংস্থা ‘কুক অ্যান্ড কেলভি’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেরামতির দায়িত্ব পেল কলকাতার বিবি দত্ত কোম্পানি। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তারাই ছিল দায়িত্বে। পরবর্তীতে চুঁচুড়ার এম এস হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির হাতে আসে ঐতিহাসিক ঘড়ি দেখভালের দায়িত্ব। এখনও পর্যন্ত তাঁরাই ঘড়িটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।
চুঁচুড়া পুরসভার পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, এই ঘড়ি হুগলি জেলার ঐতিহ্য। ঘড়িটি যাতে ঠিক থাকে সেই বিষয়ে নজর রাখা হয়। পুরসভার ভাবনায় রয়েছে, কীভাবে জায়গাটির সৌন্দর্যায়ন করা যায়। ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্মী সৈয়দ মহম্মদ আজম জানান, বহু ইতিহাসের সাক্ষীকে ঘড়িটিকে ঠিক রাখতে সদা তৎপর তাঁরা। সাত দিন অন্তর দম দেওয়া, চার বছর অন্তর ভেতরের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.