নবেন্দু ঘোষ,বসিরহাট: প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। টাকির রায়চৌধুরি পরিবারের জমিদারদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল টাকির কুলেশ্বরী কালীবাড়ির পুজো। সেই থেকে আজও একইভাবে চলছে পুজো। এবছরও তুঙ্গে পুজোর প্রস্তুতি।
কথিত আছে, টাকি ঘুরতে গিয়ে নদীর পারে প্রথম কালীপুজো করেছিলেন মানসিংহ। এরপর সেই পুজোর ঘট নদীর জলে ভাসতে ভাসতে তার ঠিক ৫০ মিটার দূরেই গড়ে উঠেছে কালীমন্দির। আবার কেউ বলেন, কোনও সাধক ইছামতীর পাড়ে মা কালীর সাধনা করেন এবং সেই ঘট নদীর পাড়ে পড়েছিল। এরপর টাকির জমিদারকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন ওই ঘট প্রতিষ্ঠা করার। তখনই টাকির জমিদার কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেওয়া হয় কুলেশ্বরী কালীমন্দির। কারণ, নদীর কুলেই এই মন্দিরের ঘট পাওয়া গিয়েছিল।
জানা গিয়েছে, প্রথম থেকেই এখানে পুজো করার জন্য ব্রাহ্মণ আসেন বাংলাদেশ থেকে। এক পূজারী জানান, মন্দিরে মায়ের যে মূর্তি আছে প্রথম থেকে সেটিই রয়েছে। তবে প্রত্যেকবার পুজোর আগে কৃষ্ণ একাদশীতে অঙ্গরাগ হয় অর্থাৎ মায়ের মূর্তিতে রং করা হয়। জানা গিয়েছে, মন্দিরে এখনও সেই মাটির ঘটই রয়েছে, যেটিকে কেন্দ্র করে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শ্যামা পুজোর ভোর ৫.৩০ নাগাদ দেবীকে জাগানো হয়। তারপর তাঁকে মুখ হাত-পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। সন্ধেয় মাকে নতুন পোশাক পরানো হয়। এরপর ফুলের মালা ও সোনার অলংকারে সাজানো হয় দেবীকে। একইসঙ্গে সাজানো হয় মহাদেবকেও। সন্ধেবেলা আরতি দেখতে ভিড় করেন ভক্তরা। পুজোর দিন মায়ের জন্য থাকে বিশেষ ভোগের আয়োজন। যেমন, মাছ ভাজা, বলির পাঁঠার মাংস, পোলাও, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি।
কালীপুজোর রাতে হয় বিশেষ পুজো। বলির সংখ্যা কমলেও এখনও প্রায় ৪০-৫০টি পাঁঠা বলি হয় এই পুজোয়। প্রথম বলি হয় পূজারীর নামে উৎসর্গ পাঁঠার। কিন্তু কেন আজও বলি হয় এই মন্দিরে? এ প্রসঙ্গে মন্দিরের পূজারী জানান, ছাগ পুরাণ অনুযায়ী বলি শাস্ত্র বিরুদ্ধ নয়। উল্লেখ্য, বলি শেষে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় ভোগ বিতরণ। সারারাত ভক্তদের ভিড় থাকে মন্দির চত্বরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.