ফাইল ছবি।
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের ফের বঙ্গভঙ্গের উসকানি উত্তরাঞ্চল জুড়ে! কখনও কামতাপুরী, কখনও গোর্খাদের আবেগ হাতিয়ার করে বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানির জিগির উঠেছে। এবার কামতাপুরী-সহ বিভিন সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনতে নিম্ন অসমের কোকরাঝাড় জেলার গোসাইগাঁওয়ে ‘কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল’-এর গণ সমাবেশের ডাক দিলেন কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর এক ভিডিও বার্তায় তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। আগামী ২৩ মার্চ, কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের সভায় থাকতে পারেন কেএলও সুপ্রিমো স্বয়ং।বৃহস্পতিবারের ভিডিও বার্তায় জীবন সিংহ রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হননি। সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। বিশেষত কামতাপুরীদের উপর পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বেশি সরব হয়েছেন কেএলও সুপ্রিমো।ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, “তৃণমূল সরকারের রাজবংশী বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মরণপণ আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।”
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে জীবন সিংহর ওই ধরনের পদক্ষেপ ঘিরে উত্তরের রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। যদিও এ বিষয়ে যথেষ্ট সংযত শাসক ও বিরোধী দলের নেতৃত্ব।পরিস্থিতির উপরে নজর রাখলেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। অন্যদিকে, গোয়েন্দা পুলিশও যথেষ্ট সক্রিয় হয়েছে। উত্তরের কামতাপুরী আন্দোলনের কোন দল এবং নেতারা গোসাইগাঁওয়ের সমাবেশে যোগ দিচ্ছে, তা তাঁরা জানতে সচেষ্ট। এমন তৎপরতার কারণ, জীবন সিংহের ভিডিও বার্তা থেকেই স্পষ্ট বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বড়সড় আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সুপ্রিমো জীবন সিংহ ছ’জন অনুগামীকে নিয়ে নাগাল্যান্ডের মন জেলার মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নয়াবস্তি এলাকায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে তাঁর শান্তি বৈঠকের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সরকারিভাবে ওই বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। এরপর কেপিপি নেতৃত্ব অভিযোগ তোলেন, শান্তি বৈঠক হবে কি না এবং হলে কবে হতে পারে, সেটা কেন্দ্রীয় সরকার না জানিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ভিডিও বার্তায় কেএলও সুপ্রিমো কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটি শব্দ খরচ করেননি। উলটে তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সমাবেশের অনুমতি দেয়নি।
অসমের কোকরাঝাড় জেলার গোসাইগাঁওয়ে পুরোপুরি সরকারি অনুমতি নিয়েই গণ সমাবেশ হচ্ছে বলে দাবি জীবন সিংহর। এরপরই রাজ্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এখানে কলকাতা কেন্দ্রিক শাসন চলছে। এখানকার পুলিশ রাজবংশী ও কামতাপুরী বিরোধী।” তিনি অভিযোগ করেন, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাটে পুলিশ রাজবংশীদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে ডেকে নিয়ে অমানবিক অত্যাচার করছে। কেএলও সুপ্রিমো বলেন, “আমরা ভারতীয় কিন্তু কলকাতার অধীনে থাকতে চাই না। তাই কামতাপুরী রাজ্য গঠনের দাবিতে গণ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.