সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: আকাশে রঙিন হাতছানি, নিচে রংবাহার। আক্ষরিক অর্থেই লাল-নীল-সবুজের মেলা লেগেছিল। আর সেই মেলায় শামিল হয়েছিলেন আট থেকে আশি। হাতে লাটাই, সুতো। আর ও প্রান্তে বাঁধা বন্ধনহীন রঙিন ঘুড়ি। শীতের হাওয়ায় পতপত করে উড়ে বেড়িয়েছে দিনভর। শিলিগুড়ির হিন্দি হাইস্কুল মাঠে রবিবার ঘুড়িকে কেন্দ্র করে শহুরে জনজীবন যেন পিছিয়ে গিয়েছিল অন্তত এক যুগ আগে। যেখানে শহরের আকাশে সব সময় ছেয়ে থাকত রঙিন ঘুড়ি। হারানো সেই দশকই আবার ফিরে এসেছিল শহরে।
পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গাদের এদিন ছিল বিশেষ কদর। ঘু়ড়ি উপলক্ষ হলেও তাকে কেন্দ্র করে গোটা শহর এদিন মেতে উঠেছিল নানাবিধ অনুষ্ঠানের উৎসবে। শুধু উৎসবেই সীমাবদ্ধ ছিল না, রীতিমতো ঘুড়ির লড়াইয়ের প্রতিযোগিতাও রাখা হয়েছিল আয়োজকদের তরফে। শহরের আকাশ থেকে হারিয়ে যাওয়া ঘুড়ি ফিরিয়ে আনতেই এই আয়োজন বলে জানান ‘লায়ন্স ক্লাব অব শিলিগুড়ি’-র তরফে অভিষেক আগরওয়াল। তবে শুধু খুশি আর মহোৎসব নয়, এখান থেকে আয় করা অর্থ ব্যবহার হবে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের চিকিৎসার জন্য। ঘুড়িকে কেন্দ্র করে উৎসব হলেও কচিকাঁচাদের জন্য ছিল নানা রকম বিনোদনের উপকরণ। সঙ্গে খাবারের স্টল, আনন্দ এবং গান বাজনা।
আয়োজকদের তরফে অভিষেকবাবু জানান, প্রতিযোগিতাটি মূলত সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে প্রতিযোগিতার পর একসঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর একটি উৎসব তাঁরা আয়োজন করেন, তাতে ছিল খোলা আহ্বান। সেখানে অংশ নেয় প্রায় একশোর উপর ঘুড়িপ্রেমী। শিলিগুড়ি-সহ আশপাশের এলাকায় কমেছে ঘুড়ি ওড়ানোর চল। আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে শহরের আকাশে ঘুড়ির লড়াই। ফলে এদিন ঘুড়ির টানে ভিড় জমিয়েছিলেন বেশিরভাগ প্রৌঢ়রাই। অনেকেই সঙ্গে নাতি-নাতনিদের নিয়ে এসেছিলেন। সব ধরনের মানুষ এলেও ঘুড়ি নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পঞ্চাশোর্ধরা। এসএফ রোডের রাধিকাপ্রসাদ চৌধুরি হাতে একটি বড় চাঁদিয়াল নিয়ে জানান, “ছোটবেলায় সকাল হলেই ঘুড়ি, লাটাই, মাঞ্জা ঘুরতো মনে। আগের দিন অন্য পাড়ার ছেলে ঘুড়ি কেটে দিয়েছিল, তার জবাব দিতে হবে। এখন সে সব দিন নেই। বাচ্চারাও কেরিয়ারকেন্দ্রিক খেলা খেলে।” একই রকম আবেগমথিত হয়ে পড়েন ঘনশ্যাম গোয়েল, বিজয়প্রতাপ সাহানিরা। উৎসবের উদ্দেশ্য যে সফল তা মালুম হচ্ছিল পাকা চুলের আড়ালে চকচকে চোখ দেখে।
[সার্ভারে হানা দিয়ে আফ্রিকার এই দেশের টেলিকম পরিষেবা বিপর্যস্ত করল হ্যাকার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.