অশোকনগরে গ্রেপ্তার 'সুদখোর' পাচারকারী। নিজস্ব চিত্র
অর্ণব দাস, বারাসত: অবিশ্বাস্য চড়া সুদের চাপে কিডনি পাচারের অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করল অশোকনগর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম পিয়ালী দে (৪২), মৌসুমী সর্দার (৩১) ও গুরুপদ জানা ওরফে অমিত। এদের মধ্যে পিয়ালীর বাড়ি বারাসতে, মৌসুমীর বাড়ি বাড়ুইপুর এবং অমিতের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে, যদিও সে থাকত যাদবপুরে। প্রত্যেকের সঙ্গেই কলকাতার সেই বেসরকারি হাসপাতালের যোগসূত্র মিলেছে।
সূত্রের খবর, ধৃত অমিতই হল এই টিমের পাণ্ডা। তাঁর কাছেই থাকত কিডনির খদ্দের। ধৃত বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতলের মত সুদখোর এজেন্টরা সরাসরি এই অমিতের সঙ্গেই যোগাযোগে থাকত। শীতলের মত এজেন্টদের কাজ ছিল বছরে ৩৬০ শতাংশ সুদে ধার দিয়ে হতদরিদ্রদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কিডনি বিক্রির চাপ দিয়ে রাজি করানো। এরপর কাজ শুরু হত পিয়ালী, মৌসুমী ও তার স্বামী ধৃত গৌর সর্দারের। এরা সকলেই কলকাতার সেই নামী বেসরকারি হাসপাতালের (যেখানে অস্ত্রোপচার হত) আয়া ও অস্থায়ী কর্মী ছিল। সেই সূত্রেই কিডনি বিক্রির চক্রে যুক্ত হওয়া। তাদের কাজ ছিল কিডনি দাতা ও গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় নথি ও আইনি ছাড় আদায় করা। মহকুমা প্রশাসন স্তরে হেয়ারিংয়ে কোনো কিডনি দাতার আবেদন ‘নট রেকমেন্ডেড’ হলেও এই তিনজন সেই বেসরকারি হাসপাতালে কাজের সূত্রে ‘না কে হ্যাঁ’ করানোর কাজ টাও করত। যেমনটা হয়েছিল অশোকনগরের অভিযোগকারীর স্ত্রীর সঙ্গে।
পুলিশ সূত্রে খবর, চাপে যারা কিডনি বিক্রি করছে তারা পাঁচ সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি পেত না। সুদখোর এজেন্টা পেত পনেরো-ষোল লক্ষ টাকা। এই রেট ফিক্সড থাকলেও অমিত ও তাঁর সাগরেদরা নিত কয়েকগুণ বেশি টাকা। খদ্দের হিসাবে ব্লাড গ্রূপ অনুযায়ী অমিতদের রেট চার্ট ছিল আলাদা। বিরল নেগেটিভ গ্রূপের রক্তের কারও কিডনি লাগলে তাঁর দর ছিল অনেক চড়া। সুদখোরদের সুদে টাকা খাটাতে অমিতরাই ছিল ফাইন্যান্সার। শুধুমাত্র অশোকনগর থানা এলাকাতেই নয়, সংলগ্ন হাবড়া, দেগঙ্গা, বারাসত, মধ্যমগ্রাম, দত্তপুকুর এলাকার সুদখোররাও ছিল অমিতদের সঙ্গে যোগাযোগে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, অশোকনগর এলাকার কমবেশি ১৫ জনের কিডনি বিক্রি করিয়েছিল শীতল। বাকি এলাকা এই সংখ্যাটা কত হবে তা জানতে ইতিমধ্যেই চড়া সুদের কারবারিদের আতসকাচের নিচে রেখেছে পুলিশ। ধৃত তিনজনকে বুধবার বারাসত আদালতে পেশ করা হলে ৬দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বারাসত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া জানিয়েছেন, ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বয়ান যাচাই করা হচ্ছে। আর কারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরও খোঁজ চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.