কৃষ্ণকুমার দাস, খেজুরি: বছরের পর বছর নির্বাচন এলে ব্রিজ, মাছের খটিকে চাতাল করে দেবে বলে বাপ -বেটায় শুধুই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়ে গিয়েছে। খেজুরির মানুষকে শুধুই নিজেদের পদ বাড়াতে ব্যবহার করেছে শিশির-শুভেন্দু। একটাও কথা রাখেনি। বুধবার রসুলপুর নদীর তীরে খেজুরির বোগায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে পেয়ে এভাবেই দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ উগরে দিলেন এলাকার মৎস্যজীবিরা।
কাঁথির পনেরো বছরের সাংসদ শিশির অধিকারী এবং খেজুরির বর্তমান বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিকের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেন সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবিরা। বলেন,”চার বছর আগেও ফের ভোট চাইতে এসে এই রসুলপুর নদীতে সেতু বানিয়ে দেবেন বলেছিলেন শিশিরবাবু। বাবার পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনের সময় ছেলে শুভেন্দুও এসে শান্তনুর হয়ে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের অনেক কিছু পাইয়ে দেব বলে ভোট নিয়ে গেল। এত বছরে বিধানসভা বা লোকসভা, কোথাও আমাদের জন্য কেউ কিছু বলেননি। ফেরিঘাট সংস্কার হয়নি। শুধু মৎস্যজীবীদের জন্য বছর খানেক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমা কার্ড করে দেওয়ায় এখন কিছু সুবিধা পাচ্ছি।”
সঙ্গে সঙ্গে কার্ড হতে নিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন অভিষেক। এভাবেই প্রায় চল্লিশ মিনিট খেজুরির বোগায় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে একের পর এক অভিযোগ ও তাঁদের সমস্যা এবং দুর্ভোগের কথা মন দিয়ে শোনেন তিনি। যোগাযোগের জন্য গোড়াহারের রবীন বর, অলিচকের মলয় দাস, নিজকসবার সোমনাথ গিরিদের ফোন নম্বর নিয়ে নেন। কারণ, এরাই একে একে শিশির ও শুভেন্দুদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথা অভিষেককে সামনে পেয়ে অভিযোগ করেছিলেন। প্রত্যেকটি অভিযোগ ও সমস্যা শুনে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। জেনে নিয়েছেন, মৎস্যজীবীদের এই পেশায় শুধু খেজুরি ব্লকেই ৮০ হাজার এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দু’লক্ষের বেশি মানুষ বছরের পর বছর উপেক্ষিত রয়েছেন।
তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে বুধবার পড়ন্ত বেলায় ভারতের অন্যতম প্রাচীন বন্দর খেজুরির রসুলপুর ঘাটে অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কয়েক হাজার মৎস্যজীবী। কাঁথি থেকে দেশপ্রাণ শাসমল ব্লকে জনস্রোত সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রা সেরে লঞ্চে করে রসুলপুর নদী পেরিয়ে তিনি বোগা পৌঁছতেই জনতার উচ্ছাস ‘জয় বাংলা ‘ আওয়াজ হয়ে আকাশ কাঁপিয়ে দেয়। আসলে ব্রিটিশ আমলে এই খেজুরি বন্দর দিয়েই এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্য হত। পাশের তাম্রলিপ্ত বন্দর ও খেজুরির মধ্যে দেশের প্রথম টেলিগ্রাম চালু হয়। প্রিন্স দ্বারকানাথ ও রাজা রাম মোহন রায় এই বন্দর থেকেই বিলেত যান। স্বভাবতই এই বোগাকে নবজোয়ারে কর্মসূচিতে বেছে নেওয়ার পিছনে যে বড় তাৎপর্য রয়েছে সেকথা বুঝিয়ে দেন অভিষেক। তাই সটান গিয়ে চেয়ার উল্টো করে ঘুরিয়ে বসে পড়েন মৎস্যজীবীদের মুখোমুখি। একদম সামনাসামনি তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে হাতের কাছে পেয়ে শেখ আজিজুল, কেশব দাসরা মৎস্যজীবীদের আর্থিক সংকট থেকে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা বলেন। আবেদন করেন, রাজ্যের সমস্ত গরিব মৎস্যজীবীদের নদী থেকে মাছ ধরার পর নৌকায় রাখার জন্য ইনসুলেটেড বক্স, মোটরসাইকেল এবং আধুনিক বেহুতি জাল দেওয়ার। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রসুলপুর নদীতে ফেরিঘাট সংস্কার ও ব্রিজ নির্মাণের পাশাপাশি প্রবীণ ও অসমর্থ মৎস্যজীবীদের জন্য ভাতারও দাবি করেন খেজুরির নদীকেন্দ্রিক পেশায় যুক্ত বাসিন্দারা। পাশে ছিলেন খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক রণজিৎ মন্ডল। হিজলি মসনদী আলাকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার আবেদন করেন খেজুরীর বাসিন্দারা।
চেয়ার নিয়ে বসে এবং পরে ঘুরে ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আলাচারিতায় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। জমি আন্দোলনে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি খেজুরীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, “কেন্দ্রের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান৷ প্রতিরোধ করুন। ১০০ দিনের কাজের টাকা পাচ্ছেন না৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রকল্প পাননি৷ আপনাদের জন্য যা করার তা রাজ্য সরকার করেছে। বছরের ওপর বছর আপনারা ভুক্তভোগী। কিন্তু কেন্দ্র কথা রাখেনি। কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে না হঠালে হবে না৷ একসাথে লড়াই করুন৷ আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। ” নদীর তীরে মৎস্য চাষের জায়গায় পরিবেশ বাঁচাতে বন দফতর গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। যার ফলে মাছ ও জাল শুকানোর অসুবিধা হচ্ছে৷ এমনই অভিযোগ শুনে সঙ্গে সঙ্গেই অভিষেক বলেন, “গাছ লাগানো সমস্যা সমাধানে বোগা থেকে দু’তিনদিনের মধ্যে মৎস্যজীবীদের একটা প্রতিনিধি দল যাবে বনমন্ত্রীর কাছে। আমি অ্যাপয়নমেন্ট করে ফোন করে আপনাদের জানিয়ে দেব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.