অর্ণব দাস, বারাকপুর: সার্থকনামা। এছাড়া আর কীই বা বলা যেতে পারে? মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প আক্ষরিক অর্থেই লক্ষ্মী এনে দিয়েছে খড়দহের (Khardah) পাতুলিয়া স্কুলপাড়ার বাসিন্দা দিলীপ সাঁতরার সংসারে। সৌজন্যে স্ত্রী দীপালি সাঁতরা। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে যখন দু’বেলা দু’মুঠো পেটের ভাত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল দিলীপবাবুকে, সেই সময় সাক্ষাৎ লক্ষ্মীর আশীর্বাদের মতো তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প। প্রকল্পের ভাতার উপর ভর করেই আজ নিজের ফুলের ব্যবসা শুরু করেছেন দিলীপ সাঁতরার স্ত্রী দীপালিদেবী। রমরমিয়ে ব্যবসা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে সংসারে এসেছে সচ্ছলতাও। আজ, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয়-পরিজনদের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সাফল্যের জ্বলন্ত বিজ্ঞাপন দীপালি সাঁতরা।
তবে, শুরুটা কিন্তু এতটা সহজ ছিল না। সাঁতরা দম্পতির দুই ছেলে। তাঁদের মধ্যে একজন চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে চাকরি করেন। স্বামী দিলীপ সাঁতরা বিভিন্ন জেলায় ভারী গাড়ি চালিয়ে যা রোজগার করতেন, তাতে বেশ চলে যাচ্ছিল সংসার। মূলত দুর্গাপুর, মুর্শিদাবাদ-সহ বিভিন্ন জেলায় ভারী গাড়ির চালক ছিলেন তিনি। কিন্তু, অতিমারীতে প্রথম লকডাউনে কাজ হারান। তারপর থেকেই শুরু হয় কার্যত অনটন যাপন।
প্রথমদিকে জমানো টাকায় সংসার চললেও পরে দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এরই মধ্যে শুরু হয় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। প্রকল্পের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ায় সাঁতরা পরিবার। কর্মহীন স্বামীর পাশে দাঁড়াতে দীপালিদেবী প্রকল্পের টাকা জমিয়ে মাসতিনেক আগে পাতুলিয়া স্কুল পাড়ার জিসি রোডের ধারে শুরু করেন ফুলের ব্যবসা। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা দেখাতে দীপালিদেবী দোকানের নামও রেখেছেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফুলের দোকান’। তাঁর এমন উদ্যোগ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলের প্রশংসা অর্জন করে ফেলেছে। কুর্নিশ জানিয়েছে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও। এখন তাঁর সাফল্যের কথাই এলাকার লোকের মুখে মুখে।
কিন্তু, কীভাবে করলেন এমন অসাধ্য সাধন? দীপালিদেবী জানান, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম ফিলাপ করার পর ঠিক করেই নিয়েছিলাম, প্রথম কয়েক মাস টাকা তুলব না। জমানো টাকায় স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য কোনও ব্যবসা করব। সেইমতোই পরিকল্পনা করে এগোতে শুরু করি। তিনমাস আগে ফুলের দোকান খুলি।” ব্যবসার ফুল কিনে আনেন তাঁদের আরেক ছেলে সুরজিৎ সাঁতরা। বাড়িতে মালা এবং ফুল প্যাকেটবন্দি করার কাজ করেন দীপালিদেবী। দোকান সামলান দিলীপবাবু। প্রথমদিকে দোকানে কেবল ফুল বিক্রি হলেও দু’পয়সা অতিরিক্ত লাভের মুখ দেখতে এখন পানীয় জল, নরম পানীয়ও বিক্রি করছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দীপালিদেবী জানালেন, “স্বামীর কাজ চলে যাওয়ার পর সংসার কী করে চলবে তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলাম। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের টাকা সেই দুশ্চিন্তা মুক্ত করে দিয়েছে। এখন ব্যবসা করেই দিব্যি সংসার চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।” বারাকপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপ্রিয়া ঘোষ বলেন,”মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে প্রচুর মহিলা উপকৃত হয়েছেন এবং অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন এটাই তার প্রমাণ। সাঁতরা দম্পতির এই উদ্যোগ আগামিদিনে অনেককে উৎসাহিত করবে। আমরা ওঁদের পাশে আছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.