অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: খড়গপুর মহকুমা শাসকের তৎপরতায় আবেদনের দুই ঘন্টার মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) কার্ড হাতে পেলেন এক অসহায় মহিলা। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার বিবাহবিচ্ছিন্না অন্নু শর্মার। বাড়ি খড়গপুর পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরি গেট এলাকায়। একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন তিনি। সামান্য রোজগারে কোনওক্রমে সংসার চালান। আর এই নিত্য চাপ ও ব্যস্ততার কারণে সরকার দুয়ারে পৌঁছালেও সময় বের করে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করাতে পারেননি অন্নু।
এরই মধ্যে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তাঁর ছেলে ভীম ওরফে রাহুল শর্মা।
মঙ্গলবার রাতে খড়গপুর কেশিয়াড়ি রাজ্য সড়কে আইআইটি বাইপাসের কাছে খড়গপুর শহরের রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাম পায়ে আঘাত লাগে ভীমের। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও চোট লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় অন্নুদেবী ছেলেকে মেদিনীপুর শহরের একটি নার্সিংহোমে ভরতি করান। চিকিৎসক জানান অস্ত্রোপচার করতে হবে যা কিনা অত্যাধিক ব্যয়বহুল। শুধু অস্ত্রোপচার করার জন্যই লাগবে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার ব্যাপার।
এই খরচের কথা শুনে অন্নুদেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। স্বল্প রোজগেরে এই দুস্থ মহিলার পক্ষে এতগুলি টাকা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব ছিল। সাহায্যের আশায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের সভাপতি সঞ্জয় লালের সাথে দেখা করেন অন্নুদেবী। সঞ্জয় তাঁকে নিয়ে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা অমিত পাণ্ডের কাছে যান। দুই তৃণমূল নেতা বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটে নাগাদ মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে খড়গপুর মহকুমা শাসকের কাছে পৌঁছে যান। সব কথা শুনে মহকুমা শাসকের উপস্থিতিতে মহিলাকে দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য ফর্ম পূরণ করানো হয়। তারপর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আবেদনের দুই ঘন্টার মধ্যে এই মহিলার হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মেদিনীপুর শহরে জেলা কার্যালয়ে তুলে দেওয়া হয়।
নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অন্নুশর্মা বলেন, “আমি ভাবতে পারিনি এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে ছেলেকে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিতে পারব। এই কার্ড না পেলে এত ব্যয়বহুল ছেলের চিকিৎসা ও অপারেশন করাতে পারতাম না। এর জন্য খড়গপুর মহকুমা শাসক মহাশয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি উদ্যোগ না নিলে এত তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটি পেতাম না।” মহকুমা শাসক আজমল হোসেন বলেন “কাজটি করতে পেরে ভাল লাগছে। চাকরি জীবনে এই ঘটনা স্মৃতি হয়ে থাকবে।” তাঁর বক্তব্য, আবেদনের ২ ঘন্টার মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাওয়া মহকুমায় এই প্রথম। এদিকে মেদিনীপুর শহরে যে নার্সিংহোমে ২১ বছরের ছেলে ভীম ভরতি রয়েছেন সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কোনও সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে শুক্রবার বিকালে সরকারি তালিকা ভুক্ত পাশের একটি নার্সিংহোমে জখম যুবককে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.