পলাশ পাত্র, তেহট্ট: ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর থেকে তার টিকিটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এনআইএ বাধ্য হয়ে সেসময় তার মাথার দাম ধার্য করে ফেলেছিল তিন লক্ষ টাকা৷ এই বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িত জেএমবি’ র শীর্ষ জঙ্গি নেতারা ধরা পড়লেও নদিয়ার থানারপাড়া থানার গমাখালির জহিরুল সেখ অধরা ছিল। অবশেষে ছেলের গ্রেপ্তারির খবর শুনে বাবা-মায়ের চোখে জল৷
গমাখালির একতলা বাড়িতে বসে ষাটোর্ধ্ব বাবা জোয়াদ আলি সেখ বলছেন, ‘ছেলে যতই খারাপ হোক, বাবা-মায়ের ব্যথা লাগে। খারাপ হলেও আমার কাছে আমার ছেলে ভাল।’ ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে জহিরুলের নাম জড়ানোর সময় তার গমাখালির বাড়ি থেকে পুলিশ ও সিআইডি যৌথ অভিযান চালিয়ে একচল্লিশটি জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করে। যা নিয়ে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। সে বছরই ইদের পর শ্বশুরের দেওয়া মোটরবাইক নিয়ে জহিরুল এলাকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। কখনও শোনা গিয়েছে, শিমুলিয়া মাদ্রাসায় সে রান্নার কাজ করে, কখনও বা চালকের কাজ করে।
জহিরুলের স্ত্রী শিমুলিয়া মাদ্রাসায় কাজ করা খানসা বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এনআইএ কর্তারা থানারপাড়ায় ছুটে গিয়েছিলেন। কখনও বা খানসার বাপেরবাড়ি করিমপুরের বরবকপুরেও গিয়েছিলেন। সেসময় খানসা বিবির কাছ থেকে আরবি এবং উর্দুতে লেখা একটি ডায়রি উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা। সেখানে জেহাদি, সাংকেতিক বিভিন্ন শব্দ লেখা, আঁকা দেখে মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল তাঁদের। জানতে পেরেছিলেন, খানসা বিবি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছে।
তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। খানসা বিবি এখন তার দুই সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকে, বলছিলেন ধৃত জহিরুলের বাবা জোয়াদ। মাঠে এখনও কাজ করেন। সেসব কথা বলতে বলতে জোয়াদ বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না আমার ছেলে খারাপ ছিল। হাই মাদ্রাসায় বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিল। ও মাঠে কাজ করত। ছেলের খারাপ কাজের কথা শুনলে ভাল লাগে না।’ জহিরুলের মা ফতেমা বিবি খবরটা শোনার পর থেকেই কেঁদে চলেছেন। এলাকার মানুষজন বলছেন, খুব চুপচাপ থাকত জহিরুল। কোনও ঝুটঝামেলায় থাকত না। সেই ছেলে এত বড় জঙ্গি! ভাবতে পারছেন না প্রতিবেশীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.