সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: স্বাধীনতারও আগে পথচলা শুরু। সত্য়াগ্রহ আন্দোলনের সময় স্বাধীনতা সংগ্রামী চারুচন্দ্র ভান্ডারির হাত ধরে তৈরি হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার খাদি মন্দির। একসময় রমরমিয়ে চলেছে সেই প্রতিষ্ঠান। বিক্রি হয়েছে খদ্দরের পোশাক। সেখানে আনাগোনা ছিল বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কালের অতল গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে সেই খাদি মন্দির। তবে সেই স্মৃতিটুকু মুছে যায়নি। পুরনো ঐতিহ্যকে বুকে নিয়ে এখনও টিমটিম করে জ্বলছে ডায়মন্ড হারবারের বর্তমান খাদি মন্দির।
চারুবাবুর হাত ধরেই হটুগঞ্জ, ডায়মন্ড হারবার, কুলপি, করঞ্জলি, কাকদ্বীপ, ফলতা, সোনারপুর-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছিল খাদিমন্দিরের চরকা কেন্দ্রগুলি। মহারাষ্ট্র থেকে তুলো এনে হটুগঞ্জের খাদিমন্দিরে চরকায় কাটা হত সুতো। সেই সুতো চলে যেত অবিভক্ত মেদিনীপুরের ইক্ষুপত্রিকা গ্রামে। চরকায় কাটা সুতোয় সেখানে প্রস্তুত হত দেশীয় খদ্দরের কাপড়জামা। বিক্রি হত সুন্দরবনের গ্রামে-গ্রামে। বিক্রির স্থান হিসেবে ডায়মন্ড হারবারের নুনগোলায় তৈরি হয়েছিল ‘খাদিমন্দির’ নামে দোকান। অগ্নিযুগের বহু বিপ্লবী এসে বসতেন খাদি মন্দিরে। আলোচনা চলতো সংগ্রামের নানা বিষয় নিয়ে। এসেছেন খোদ মহাত্মা গান্ধী, বিনোদা ভাবেরাও। দীর্ঘদিন এখানে থেকেছেন বিনোদা ভাবে।
হটুগঞ্জের ‘খাদিমন্দির আশ্রম’ কালের গর্ভে হারিয়েছে অনেকদিন আগেই। নুনগোলায় প্রতিষ্ঠিত ‘খাদিমন্দির’ও আর নেই। স্থানবদল করে দোকানটি একসময় উঠে আসে ডায়মন্ডহারবার-কাকদ্বীপ সড়কের পাশেই। দু’টি ঘর নিয়ে চলে খদ্দরের কাপড়জামা ও ঘি- মধুর বিক্রিবাটা। সেই দোকানটিও আজ একটু একটু করে হারিয়ে যেতে বসেছে।
দোকানের পরিচালক গুণধর মণ্ডল জানিয়েছেন, এখানে আর চরকায় সুতো কাটা বা কাপড় বোনা হয় না। কাঁথি থেকে আনানো হয় বোনা পোশাক। একসময় এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন শংকর ঘরামি। কিন্তু এখন আর তিনি নিয়মিত আসেন না। কারণ দোকানটিতে চাহিদামতো পোশাক মেলে না। নিয়মিত খোলাও হয় না দোকানটা।
তবে এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখা হোক চাইছেন বহু মানুষ। তবেই পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখা সম্ভব হবে। গান্ধীজির ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.