ধীমান রায়, কাটোয়া: সকালে ঘুমের রেশ তখনও কাটেনি। মুখেচোখে জল দিয়ে মালপত্র সবে গোছগাছ করছিলেন পেশায় ফেরিওয়ালা রামচতুর সাউ (৬৫)। তখনই পরিচিত এক যুবক খুব ভাব জমিয়ে তাঁর কাছে এসে বলে, ”কাকা, একটু চা হয়ে যাক? চায়ের দাম না হয় আমিই দিচ্ছি।” পরশি ভাইপোর আবদার ফেলতে পারেননি রামচতুর। কিন্তু তার আবদার রাখতে গিয়ে যেভাবে বোকা বনতে হল রামচতুরকে তা তিনি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
জীবনের ৬৫টি বসন্ত পার করে আসা বৃদ্ধ মনে মনে ভাবছেন, ‘মচতুর নামটিই আমার বৃথা হয়ে গেল।’ অভিযোগ, দোকান থেকে চা আনতে পাঠিয়ে একটি ফুঁটো বালতি রেখে রামচতুরের নিঁখুত বালতি হাপিস করে দিয়েছে তাঁর ওই পড়শি ভাইপো। তা জানতে পেরে রামচতুরবাবুর নাওয়া খাওয়া বন্ধ। বালতি উদ্ধারের আশায় তিনি শনিবার সকালে ভাতার থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন। সেখানেও আরেক ফের। সব শুনে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক তো প্রথমে হেসেই খুন। তারপর তাঁর প্রশ্ন, ”সামান্য একটা বালতির কারণে এফআইআর? তার থেকে কাকা আপনি বাড়ি চলে যান। আমরা একটা বালতি কিনে পাঠিয়ে দেব। ওই বালতির শোক ভুলে যান।” বাধ্য হয়ে অভিযোগ জমা না দিয়েই তাঁকে ঘরে ফিরতে হয়।
ভাতার বাজারে সন্তোষসায়ের পাড়ায় একটি মাটির ঘরে থাকেন রামচতুর সাউ। দেশের বাড়ি বিহার। খুব ছোটবেলায় ভাতারে চলে এসেছিলেন পেশার তাগিদে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ও টুকিটাকি জিনিস ফেরি করেন। স্ত্রী সন্তানরা বরাবরই বিহারে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে রামচতুর দেশের বাড়ি যান। তবে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ভাতার পঞ্চায়েতের কুলচন্ডা ১০ নম্বর সংসদ এলাকার ভোটার রামচতুর। অর্থাৎ তিনি এখন ভাতারেরই স্থায়ী বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রামচতুর যান ভাতার থানায়। তিনি থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন পড়শি এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনাক্রমে ওই প্রতিবেশীও বিহারি। রামচতুর পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, শনিবার সকালে ওই যুবক তাঁর হাতে ছিল একটি লোহার পাতের বালতি। তারপর পাঁচটাকা বের করে রামচতুরের হাতে দিয়ে বলেন, “কাকা দোকান থেকে একটা চা নিয়ে এসো। দু’জনে খাই।” রামচতুর বলেন, “ও জোর করাতে চা আনতে যাই। চা খেয়ে চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারি ওর ফুটো বালতিটি রেখে আমার ভাল বালতি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। দুটি বালতিরই একই সাইজ ছিল।” পরে নাকি রামচতুর ওই ফুটো বালতি নিয়ে পড়শি যুবকের কাছে গিয়েছিলেন তা পালটাতে। কিন্তু যুবকের দাবি বালতি পাল্টাপাল্টি হয়নি। জোরাজুরি করেও রামচতুর বাগ করতে না পারলে তিনি শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন। তবে পুলিশ সব শুনে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছে অভিযোগের প্রয়োজন নেই। ভাতার থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, নতুন বালতির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.