ধীমান রায়, কাটোয়া: স্কুলে টিফিনের সময়ে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসের ভিতর ‘মৌজমস্তি’ করে বিয়ারের বোতল হাতে ঠেক বসিয়েছিল নবম শ্রেণির পাঁচ ছাত্রী। তীব্র গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী শিক্ষিকাদের জানায়। স্কুলের শিক্ষিকারা সঙ্গে সঙ্গে এসে হাতেনাতে ধরে ফেলেন নবম শ্রেণির ওই পাঁচ ছাত্রীকে। শেষে স্কুলে বসে মদ্যপান করার অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে হল তাদের। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার গার্লস হাইস্কুলে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে বুধবার ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুলে হুলুস্থুল কান্ড বাধে। বিকেল নাগাদ অভিযুক্ত ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারপর সিদ্ধান্ত হয় ওই পাঁচ ছাত্রীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুলে ক্লাস করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তবে তারা পরীক্ষায় বসতে পারবে। ভাতার গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শোভনা দাস বলেন, ওই পাঁচ ছাত্রী যা অপরাধ করেছে তা স্কুলের পরিবেশকে অত্যন্ত কলুষিত করেছে। আমরা ওদের টিসি দিতে পারতাম। কিন্তু ভবিষতের কথা ভেবে তা করিনি। তবে স্কুলের আর পাঁচজনের ওপরে যাতে প্রভাব না পড়ে তার জন্য ওদের ক্লাস করার সুযোগ দেওয়া হবে না। শুধু পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ভাতার গার্লস হাইস্কুলের এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে ভাতার গার্লস হাইস্কুলের যে ভবনটিতে মিড-ডে মিল রান্না হয় সেই রান্না ঘরের পাশে রয়েছে ছাত্রীদের একটি কমনরুম। তার পাশে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয়। ঘটনার সূত্রপাত, বুধবার দুপুরে স্কুলের টিফিনের সময়। প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন টিফিন পিরিয়ড প্রায় শেষের দিকে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী এসে জানায় তাদের ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে ৫ জন নবম শ্রেণির ছাত্রী মদ্যপান করছে। আর গোটা ঘরে মদের গন্ধ ছড়াচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী গন্ধে বমি করতে করতে অসুস্থও হয়ে যায়। তখন অন্যান্য কয়েকজন সহপাঠী শিক্ষিকাদের কাছে জানায়। তারা সেখানে পৌছানোর আগেই অবশ্য দুটি ফাঁকা বোতল জানালা দিয়ে ফেলে দেয় ওই পাঁচ ছাত্রী। কিন্তু একটি প্লাস্টিকের বোতলে তখনও কিছুটা পানীয় ছিল। সেটি লুকানোর সময় শিক্ষিকারা কেড়ে নিয়ে গন্ধ শুঁকে বুঝতে পারেন মদ। পাঁচ ছাত্রীকে অফিসে ডেকে জেরা করা হয়। তারা স্বীকার করে। তবে তারা জানায় মদ নয় তারা বিয়ার পান করছিল। শিক্ষিকারা এও জানতে পারেন শুধু একদিনই নয় বেশ কিছুদিন ধরেই তারা স্কুলে বসে বসেই মদ্যপান করেছে।
পাঁচ ছাত্রীকে হাতেনাতে ধরার পর তাদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠান শিক্ষিকারা। অভিভাবকদের হাতে ছাত্রীদের তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয় তারা যেন স্কুলে ক্লাস করতে না আসে। ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রীরা মদ কোথায় কিনল? কারন ভাতার বাজারে দুটি মদের দোকান রয়েছে। বাজার থেকে কিছুটা দুরে রয়েছে একটি বার। সেসব জায়গায় প্রকাশ্যে মদ কিনতে গেলে অনেকের চোখে পড়ার কথা। ছাত্রীরা জানিয়েছে পাঁচজনের মধ্যে এক ছাত্রীর প্রেমিক দোকান থেকে বিয়ার কিনে এনে দিয়েছে। এক শিক্ষিকার কথায়,”ওরা মদপান করার জন্য একাধিক মুখরোচক খাবারও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। ধরা পড়ার যখন ওদের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন তিনজনকে বেসামাল লাগছিল। বাকি দুজন স্মার্টলি কথা বলছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ওদের নেশা করার অভ্যাস অনেকদিনের।” স্থানীয় এলাকায় ঘটনার কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর অভিভাবকদের অনেকেই চিন্তিত স্কুলের পরিবেশ নিয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.