ছবিতে পিসি ও পুলিশকাকুর সঙ্গে নাবালক, ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: ট্রেনে চেপে অনেক দূর। হ্যাঁ অনেক দূরেই পালাতে চেয়েছিল ছোট্ট শুভজিৎ। কিন্তু বড়দের নজর এড়িয়ে তা আর হল না। ফের ফিরতে হল ঘরে। দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামী সন্তানদের ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন মা। একা বাড়িতে মন টেকে না, তাই পালিয়ে গেল বছর সাতেকের নাবালক। পালানোর সময় বাবার মোবাইল ফোনটি পকেটস্থ করেছিল সে। সেই ফোনের টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরেই পলাতক শিশুকে ঘরে ফেরাল পুলিশ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার এলাকার বলগোনা বাজারে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নাবালকের নাম শুভজিৎ বিশ্বাস (৭)। শুক্রবার সকালেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সোজা চলে যায় বর্ধমান স্টেশনে। সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হওয়ার ইচ্ছে ছিল ও খুদের। তবে তার ইচ্ছেপূরণে বাদ সাধল সঙ্গে থাকা বাবা সঞ্জয় বিশ্বাসের মোবাইল ফোন। পিসি অঞ্জনা সরকার ভাইপোকে দেখতে না পেয়েই ভাতার থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানান। পুলিশ সঙ্গেসঙ্গে শুভজিৎকে ফোন করতেই সে রিসিভ করে। তবে কোথায় রয়েছে তানিয়ে কোনও তথ্যই দিতে চায়নি। পরে ফের ফোন করলে তা রিসিভও করেনি নাবালক। এরপর নাবালকের ছবি নিয়ে তড়িঘড়ি বর্ধমান স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান ভাতার থানার ওসি পুলক মণ্ডল। স্টেশন থেকে শিশুটিকে নাবালককে উদ্ধার করে ভাতারে ফিরিয়ে আনা হয়। শুক্রবার বিকেলে অঞ্জনাদেবীর হাতে ভাইপোকে তুলে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, সঞ্জয়বাবুর তিন ছেলে মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলে সমরেশ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে শুভজিৎ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। পেশায় ব্যবসায়ী সঞ্জয়বাবুর সঙ্গে স্ত্রী পূর্ণিমাদেবীর বনিবনা হচ্ছিল না. দীর্ঘদিন ধরে এমন চলার পর বছর খানেক আগে সন্তানদের ফেলেই বাপের বাড়িতে চলে যান তিনি। তারপর থেকে পিসির কাছেই বড় হচ্ছে শুভজিৎ ও সমরেশ। এদিকে বাবা-মায়ের এই অকাল বিচ্ছেদন মেনে নিতে পারেনি শুভজিৎ। তাই মাঝেমাঝেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। চলতি মাসের আট তারিকেও একবার উধাও হয়েছিল। পরে খোঁজাখুঁজি করে তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনেন পিসি। শুক্রবার ফের পালিয়ে যেতেই এক মুহূর্ত দেরি করেননি অঞ্জনাদেবী। সোজা থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানাতেই তৎপরতার সঙ্গে নাবালককে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশকাকুর হাত ধরে থানায় ফেরার পর শুভজিৎ জানায়, ট্রেনে চেপে অনেক দূরে চলে যাওয়ার ইচ্ছে তার। তাই বাবার ফোন ও ২৫টি টাকা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোয়। বাড়িতে থাকতে একদম ভাল লাগে না। মায়ের কাছেও যেতে ইচ্ছে করে না। তাই সবার থেকেই পালাতে চেয়েছিল শুভজিৎ। প্রথমবার সফল হয়নি. তবে আশা ছিল একবার ট্রেনে উঠতে পারলেই তাকে আর কেউ ধরতে পারবে না। পুলিশকাকুরা চলে এসে সব ঘেঁটে দিল। সঞ্জয়বাবুকে ছেলের মানসিক চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন ওসি। পুলিশের দাবি, শৈশবে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ শিশুমনে গভীর ছাপ ফেলাতেই এই বিপত্তি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.