আদালতের পথে অভিযুক্ত।
ধীমান রায়, কাটোয়া: সোশাল মিডিয়ায় আলাপ। ইউটিউবে ‘বচন’ শুনে গুরুজির ভক্ত হয়েছিলেন তরুণী। ভক্ত থেকে শিষ্যা। সেই শিষ্যাকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠল গুরুর বিরুদ্ধে। পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের তরুণীকে ধর্ষণে অভিযোগে আদালতে আত্মসমর্পণ করল অভিযুক্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী নামে ওই ধর্মীয় ‘কথাবাচক’ মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করে। সেই দিন তাঁর একদিনের জেল হেফাজত হয়। ফের বুধবার মঙ্গলকোট থানার পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায়। বিচারক ধৃতকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২০ জুলাই মঙ্গলকোট থানা এলাকার বছর সাতাশের এক তরুণী বৃন্দাবনের গুরুজির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। ধর্ষণ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, প্রতারণা, অপমানসূচক কথাবার্তা বলা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ।
বৃন্দাবনের বাসিন্দা গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী নামে ওই ধর্মগুরু সামাজিক মাধ্যমে পরিচিত মুখ। নিয়মিত তাঁর ধর্মীয় বচনের ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা হয়। ইউটিউবেই তাঁর ‘বচন’ শুনে আকৃষ্ট হয়েছিলেন ওই তরুণী। পরবর্তী সময়ে অভিযুক্তের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয় নির্যাতিতার।
২০২৩ সালে মে মাসে বীরভূমে এক ভাগবত পাঠের আসরে তাঁদের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তার পর গোবিন্দের ‘ভক্ত’ থেকে শিষ্যা হয়ে যান তরুণী। ২০২৩ সালের জুন মাসে মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা এলাকায় ধর্মীয় পাঠের আসরে তরুণীকে দীক্ষাদান করা হয়।
নির্যাতিতা এতটাই আকৃষ্ট হন যে গুরুজির ‘সাধনসঙ্গী’ হিসাবে থাকতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, গুরুজিও তাঁর আজীবনের দায়িত্বভার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্রমেই দুজনের মধ্যে ‘ঘনিষ্ঠতা’ও বাড়ে।
তার পরই বিপত্তি! তরুণীর দাবি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ওই গুরুজি একাধিকবার সহবাস করে। তার পর থেকে তরুণীকে এড়িয়ে চলতে থাকে অভিযুক্ত। ভুল ভাঙে তরুণীর। যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে গুরুজি ও তাঁর স্ত্রী তরুণীকে অপমানজনক কথাবার্তা বলা শুরু করে বলে অভিযোগ।
এর পর চরম মানসিক অবসাদের শিকার হন তরুণী। গত জুলাই মাসে নির্যাতিতা গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। যদিও প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘদিন চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয় তরুণীকে। একটু স্থিতিশীল হওয়ার পর জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি মঙ্গলকোট থানায় গুরুজির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরের পরই অভিযুক্ত গুরুজি আগাম জামিন চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। মঙ্গলবার কাটোয়া আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করেন গোবিন্দ। বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এর পর মঙ্গলকোট থানার পুলিশ গুরুজিকে তদন্তের স্বার্থে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়।
সূত্রের খবর, বছর পঁয়ত্রিশের গোবিন্দর পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ৫০ বছর আগে তাঁরা চলে যান বৃন্দাবনে। এখন বৃন্দাবনেরই বাসিন্দা তাঁরা। এদিন আদালতে তোলার সময় গোবিন্দ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুখে মাস্ক বাঁধা ছিল সাংবাদিকদের প্রশ্নে নির্বিকার ছিলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.