কাটোয়া হাসপাতাল। ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: “খেলা হবে। এই খেলার মাঝে যে আসবে সে ফিনিশ হয়ে যাবে। দেখতে থাকুন। জীবনে কোনওদিন হারিনি। সেটা খেলার মাঠেই হোক। আর জীবনের খেলাতেই হোক। সব জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছি।”
বক্তা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা এবং তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কাউকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন এমনটাই হয়তো প্রথমে ভেবে বসতে পারেন পাঠকরা। কিন্তু ধারণা ভুল। ‘বক্তা’ একজন ঠিকাদার। আর তিনি এই ‘হুমকি’ দিচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডাঃ সৌভিক আলমকে। বকেয়া বিল আদায়ের জন্য এভাবেই হোয়াটসআ্যাপে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল কাটোয়ার এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
কিংশুক মণ্ডল নামে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাটোয়া থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন হাসপাতালের সুপার। সুপারের অভিযোগ,”কিংশুক মণ্ডল লাগাতার হুমকি দিয়ে মানসিক চাপ তৈরি করে চলেছে। কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তার ফলে হাসপাতালে স্বাভাবিক কাজকর্ম, সাধারণ মানুষের পরিষেবা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
উল্লেখ্য, এবছর ১৬ এপ্রিল কাটোয়া হাসপাতালে সুপার পদে দায়িত্ব নেন ডাঃ সৌভিক আলম। তার মাসখানেকের মধ্যেই কাটোয়া হাসপাতালে যাচাই কমিটির কাছে ধরা পড়ে হাসপাতালে প্রচুর অসঙ্গতিপূর্ণ বিল জমা পড়েছে। হাসপাতালে বনসৃজন করা, ওষুধপত্র, আসবাবপত্র কেনা থেকে শুরু করে বহু বিলে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এমনকী, শুধুমাত্র বিরিয়ানির বিল ধরা হয়েছে তিন লক্ষাধিক টাকা। এই ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ ৮১টি বিল চিহ্নিত করে সেগুলি আটকে দেওয়া হয়। যদিও সেগুলি একাধিক ঠিকাদার সংস্থার দাখিল করা বিল বলে জানা গিয়েছে। সেগুলি নিয়ে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়। পাশাপাশি ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে মামলাও হয়। এই অবস্থার মধ্যে এবার এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে হাসপাতাল সুপার সোমবার কাটোয়া থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হল।
কাটোয়া হাসপাতালের সুপার জানান, অনেকদিন ধরেই তাকে হুমকি দেওয়া মেসেজ পাঠাচ্ছে কিংশুক মণ্ডল নামে ওই ঠিকাদার। এদিন অভিযুক্ত ঠিকাদার কিংশুকের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। সুপার তার অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক থেকে প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে। কাটোয়া মহকুমাশাসক অর্চনা পি ওয়াংখের বলেন,” আমি এখনও অভিযোগপত্র হাতে পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
এ প্রসঙ্গে কাটোয়ার বিধায়ক তথা কাটোয়া হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাটোয়া হাসপাতালে বর্তমান সুপার দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগেই ঠিকাদারদের দাখিল করা বেশকিছু বিল রয়েছে যেগুলি অসঙ্গতিপূর্ণ। সেগুলি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। যদি ওইসমস্ত বিল পেমেন্ট নিয়ে সুপারকে কেউ এই ধরনের হুমকি দেয় তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.