ধীমান রায়, কাটোয়া: একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তিনি আর মায়ের খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। বৃদ্ধার একমাত্র অবলম্বন বলতে ছিল বিধবা মেয়েটা। কিন্তু মেয়ে প্রায় বছর দু’য়েক আগে মারা গিয়েছেন। ফলে অসহায় অশীতিপর বৃদ্ধার অর্ধাহারে-অনাহারেই দিন কাটছিল। তাই কাটোয়ার পাবনা কলোনির বাসিন্দা ৮৭ বছরের অসহায় বৃদ্ধা অঞ্জলি সাহার খাওয়াপরার দায়িত্ব নিয়েছেন ছয় কলেজ পড়ুয়া। পালা করে ওই বৃদ্ধাকে খাবার পৌঁছে দেওয়া, অসুস্থ বৃদ্ধার চিকিৎসা করানো থেকে দেখভাল- সবকিছুই করছে কাটোয়ার ওই ছয় তরুণ-তরুণী। আর জীবনের শেষ লগ্নে অনাত্মীয়দের থেকে এই ভালবাসাটুকু পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে অঞ্জলিদেবীর।
কাটোয়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাবনা কলোনির একটি কুঁড়ে ঘরে থাকেন অঞ্জলিদেবী। জানা গিয়েছে, তাঁদের আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশে। প্রায় ৪৫ বছর আগে বাবা-মার সঙ্গে এদেশে চলে আসেন তাঁরা। তখন অঞ্জলিদেবীর স্বামী দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাবনা কলোনিতেই উঠেছিলেন। ছেলের নাম গোরাচাঁদ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কর্মসূত্রে কোচবিহার জেলার মাথাভাঙায় থাকেন অঞ্জলিদেবীর ছেলে। মেয়ে অঞ্জনা ছিলেন বিধবা নিঃসন্তান। তিনিই পরিচারিকার কাজ করে মাকে দেখাশোনা করতেন। পাবনা কলোনিতে জনৈক আশিস সান্যালের বাড়িতে একটি ঘরে মাকে সঙ্গে নিয়ে ভাড়া থাকতেন অঞ্জনাদেবী। তার মৃত্যুর পর অঞ্জলিদেবী অসহায় হয়ে পড়েন। কিন্তু মানবিকতার খাতিরে আশিসবাবু তাঁকে উচ্ছেদ করেননি। বরঞ্চ বিনা ভাড়ায় একটি কুঁড়েঘরে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
[ছেলে মোবাইল কেড়ে নেওয়ায় অভিমানে আত্মঘাতী মা]
জানা যায়, অঞ্জনাদেবীর মৃত্যুর পর প্রবীর সেনগুপ্ত নামে এক ব্যবসায়ী ওই বৃ্দ্ধাকে দু’বেলা খাবার দিতেন। কিন্তু ব্যবসার কারণে প্রায়ই প্রবীরবাবুকে বাইরে থাকতে হয়। তাই তাঁর পক্ষে নিয়মিত দেখাশোনা করা মুশকিল। এমন অবস্থায় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ওই কলেজ পড়ুয়াদের। বৃদ্ধার দায়িত্ব নিতে রাজি হন কাটোয়া কলেজের ঈশিতা গোস্বামী, মানস ঘোষ, কচি শেখ, রূপম পোদ্দার, রাহুল মাজি ও প্রবীর দাস।
কচি শেখ জানিয়েছেন, প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধার অসহায় পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন তাঁরা। তারপর গত ১ নভেম্বর থেকে বৃদ্ধার ঘরে দু’বেলা করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। কখনও বাড়ি থেকে, কখনও নিরামিষ হোটেলে অর্ডার দিয়ে বৃদ্ধার জন্য টিফিন কৌটো করে খাবার পৌঁছে দিয়ে তাঁকে খাইয়ে আসছেন ওই ছয় পড়ুয়া। ঈশিতা জানিয়েছেন, শুক্রবার অঞ্জলিদেবীর শরীর খারাপ করেছিল। তাঁকে কাটোয়া হাসপাতালে দেখিয়ে নিয়ে আসেন তাঁরা। তরুণ পড়ুয়াদের কাছে এই মহানুভবতা পেয়ে আপ্লুত বৃদ্ধা। অঞ্জলিদেবী বলেন, ‘আমার ছেলে আমায় দেখে না। মেয়ে মারা যাওয়ার পর ভেবেছিলাম নিজের জীবনটা শেষ করে দিই। কিন্তু আমার এই নাতি-নাতনিরাই আমাকে ভালবাসার বন্ধনে বেঁধে রেখেছে।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
[ভিড়িঙ্গির ফ্ল্যাটে রাজীবকে নিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাল পুলিশ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.