ধীমান রায়, কাটোয়া: সকাল হলেই দুই শিশু সন্তানের হাতে এক টুকরো করে রুটি ধরিয়ে দিতেন মা। কিন্তু সোমবার সকালে পাঁচ বছরের মেয়ে ও আড়াই বছরের ছেলের ঘুম ভাঙার পর দেখে মা তখনও শুয়ে রয়েছেন। অবুঝ সন্তানরা জানে না তাদের মা আর নেই। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে দু’জন অপেক্ষা করে মায়ের ঘুম ভাঙার। কিন্তু মা আর ওঠেননি। রাতে সন্তানদের নিয়ে ঘুমানোর পর কখন যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে জানতেই পারল না দুই দুধের সন্তান। সোমবার এই ঘটনার সাক্ষী রইল কাটোয়া সাত নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া এলাকা৷
রেল প্ল্যাটফর্মের পাশে কয়েকটি ঝুপড়ি ঘরে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের টুকিটাকি জিনিস রাখতেন। তারই পাশে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া একটি কুঠুরিতে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সরস্বতী। মুর্শিদাবাদের লালগোলায় বাড়ি ছিল তাঁর। একই জেলায় বাড়ি তাঁর স্বামী দেবীলাল মারান্ডির। প্রায় ৮ বছর আগে কাটোয়ায় চলে আসেন দু’জনে। সরস্বতী মাঝি দুই সন্তানকে নিয়ে কোনওক্রমে ওই ঝুপড়ি ঘরেই থাকতেন৷ ওই মহিলার স্বামী দেবীলাল মারান্ডি নেশায় আসক্ত। পরিবারকে দেখত না। দেবীলাল মাঝেমঝ্যে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে আসতেন। ঘুরে ঘুরে কাগজ কুড়িয়ে, বিক্রি করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে দুই শিশু সন্তানের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতেন সরস্বতী। স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু শেখ জানান, প্রায় ১০-১২ দিন ধরে ওই মহিলাটিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখেছি। পাঁচ-ছয়দিন ধরে কাজে যেতে পারেননি। তাই কয়েকদিন সরস্বতী খাবারও পাননি। কারও কারও দাবি, অনাহারেই মৃত্যু হয়েছে বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলার।
স্থানীয়রাই চাঁদা তুলে মহিলার দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেন। রেলপুলিশের কাছে মহিলার স্বামী দেবীলাল প্রতিশ্রুতি দেন তিনি তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব নেবেন। যদিও এ নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে স্থানীয়দের। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় আশ্বাস দেন ওই শিশুদুটির কেউ দেখাশোনা না করলে, তাদের হোমে রাখার বন্দোবস্ত করা হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.