ধীমান রায়, কাটোয়া: পরিবারের ইচ্ছা ছিল জন্মদিনটা একটু ধুমধাম করে সেলিব্রেট করার। ৬ বছরের ছেলে তা নিয়ে আগেভাগেই বাবাকে বলেও রেখেছিল। কিন্তু পরিবারের শখ না মিটিয়ে জন্মদিনটা ব্লাডব্যাংকে কাটালেন কাটোয়া থানা এলাকার দাঁইহাট শহরের বাসিন্দা দেবাশিস রায়। পেশায় ব্যবসায়ী। নিজের জন্মদিন উপলক্ষে দেবাশিসবাবু ব্লাডব্যাংকে গিয়ে রক্তদান করলেন। তাঁর এই উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে এলাকায়। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের কর্মীরাও তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দাঁইহাট শহরের পাতাইহাটে বাড়ি দেবাশিস রায়ের। পানুহাটে তার টেরাকোটা শিল্পসামগ্রীর দোকান রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেন দেবাশিসবাবু। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, ভাই, স্ত্রী ও এক সন্তান। ছেলে দেবমাল্য প্রথম শ্রেণির ছাত্র। বুধবার ৪৫ বছর পূর্ণ করে ৪৬-এ পা দিলেন দেবাশিসবাবু। আর নিজের জন্মদিনে কাটোয়া ব্লাডব্যাংকে গিয়ে রক্তদান করলেন। সেই রক্ত দেওয়া হল একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে।
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই কাটোয়া মহকুমা ব্লাডব্যাংকে রক্ত সংকট চলছে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে এমনিতেই রয়েছে প্রচুর রোগীর চাপ। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বোতল রক্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয়। কাটোয়া ব্লাডব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আধাকারিক ডঃ বাণীব্রত আচার্য, কর্মী আজিজুল শেখ বলেন, “দেবাশিস রায় নামে ওই ব্যক্তি আমাদের কাছে প্রথমে ফোনে জানান তিনি তাঁর জন্মদিনে ব্লাডব্যাংকে এসে রক্ত দিতে চান। আমরা সম্মতি দিলে ওঁ একাই এদিন এসে রক্তদান করেন। তবে নিজের জন্মদিনে এভাবে রক্তদান করা কাটোয়া ব্লাডব্যাংক ইতিপূর্বে ঘটেনি। আমরা ওঁর এই ভাবনাকে সাধুবাদ জানাই।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবাশিসবাবুর দান করা রক্ত এদিনই একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে দেওয়া হয়েছে। দেবাশিস রায়ের স্ত্রী শীলাদেবী বলেন, “আমার ছেলে বায়না করছিল ওর বাবার জন্মদিনে খুব ধুমধাম করবে। কিন্তু আমার স্বামী ছেলেকে বলেন, তোমার মতোই একটা বাচ্চা খুব অসুস্থ। তাকে দেখতে যেতে হবে।” এই বলে ছেলেকে বুঝিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। আমরা এই মহৎ কাজে বাধা দিইনি।”
এনিয়ে ২৫ বার রক্তদান করলেন দেবাশিসবাবু। তবে জন্মদিনে রক্তদান এই প্রথম তাঁর। দেবাশিসবাবুর কথায়, “আমার এই সামান্য কাজে যদি কেউ উৎসাহী হয়ে রক্তদানে এগিয়ে আসেন সেটাই হবে আমার চরম প্রাপ্তি।”
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.