চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: লকডাউন, কারফিউ, সন্ত্রাসবাদ – এসব শব্দ খুব পরিচিত। এই আবহের মধ্য থেকেই কেটে গেছে জীবনের অর্ধেকটা সময়। দু’মাস, তিন মাস, এমনকী টানা ছ’মাস ধরেও ঘরে বন্দিদশা কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে আলতাব মীরের। তবে এবারে করোনা আতঙ্কে দেশজুড়ে লকডাউনে বিপর্যস্ত কাশ্মীরি এই শালওয়ালারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে আসানসোলের গড়াই রোডের বাসস্ট্যান্ডে একমনে বসেছিলেন আলতাব। তাঁকে ঘিরে থাকা স্থানীয়দের বলছিলেন, “আতঙ্কবাদ সে খউফ নেহি হ্যায় জো ডর আভি ইয়ে করোনা ভাইরাসসে হ্যায়।”
শীতের মরশুম এলেই কাশ্মীরের শাল বিক্রেতারা ছুটে আসেন কলকাতা-সহ জেলায় জেলায়। গত অক্টোবর মাসে আসানসোলে এসেছেন ৯০ জন শাল বিক্রেতারা। ফিরে যাওয়ার কথা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। চারমাস ধরে বাড়ি বাড়ি শাল, সোয়েটার, কার্ডিগান, জ্যাকেট বিক্রি করে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ক্রেতাদের বকেয়া ধারের টাকা তুলে ফিরে যাওয়ার কথা।
কিন্তু বাধ সাধল করোনা ভাইরাসের জেরে দেশজুড়ে লকডাউন।ভিনরাজ্যে আটকে থাকা আলতাব মীরের কপালে ভাঁজ। লকডাউনের জেরে বিক্রিবাটার পর লাভের গুড় পিঁপড়েই খেতে বসেছে। আলতাবের কথায়, “৯৪ সাল সে আ রাহা হুঁ দাদা। কভি দিক্কত নেহি হুয়া হ্যায়। কসম সে, আব ডর লগ রহা হ্যায়।” এখানেই রয়েছেন কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা জাভেদ শামিম। বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন চেলিডাঙা অঞ্চলে। জাভেদ বলছেন, “লকডাউন, কারফিউ হামলোগকে লিয়ে নেয়া নেহি হ্যায়। মগর হাত মে পয়সা নেহি হ্যায়। রাশন পানি, খানে পিনাকা সমান ভি খতম হোনে লাগা। উধার লালচক মে বিবি-বাচ্চা আকেলা পড়া হ্যায়। ইধার হাম পড়া হ্যায় আকেলা”। জিজ্ঞেস করা হল, “রিলিফ প্যাকেজ পেয়েছেন।” ঠোঁট উলটিয়ে, ঘাড় নেড়ে জাভেদ বললেন না। আক্ষেপের সুরে তাঁর বক্তব্য, তাঁরা তো ব্যবসা করতে এসেছেন। তাঁদের রিলিফ কে দেবে?
আসানসোলের আপার চেলিডাঙা অঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন জনা পঁচিশেক কাশ্মীরি। তাঁরা কেউই ফিরে যেতে পারেননি। লকডাউনের জেরে বকেয়া টাকাও দিচ্ছেন না ক্রেতারা। ওদিকে বাড়িওয়ালাও ভাড়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। আরেক কাশ্মীরি বিলাল মির্জা ভাঙা বাংলায় বললেন, “আমরা যখন এখানে এলাম ৩৭০ ধারা রদের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরে। আমাদের ফিরে যাওয়ার সময় দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে গেল। খবরে দেখলাম, লকডাউন পরিস্থিতিতেও জম্মু ও কাশ্মীরে COVID-19 সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আমার পরিবার ওখানে অসহায়, এখানে আমি অসহায়। আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিবারের পাশে থাকতে চাই।” তাঁদের সকলের করুণ আরজি এখন এই একটাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.