সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাজার থেকে দরদাম করে কার্তিক কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন গৃহকর্তা৷ যথারীতি শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি৷ আচমকাই বাড়ি খুদের ইচ্ছা হল, কার্তিকের বাহন ময়ূর দেখার। কার্তিকের পোশাকের একাংশ সরাতেই আঁতকে ওঠে শিশুটি। ‘মা, ময়ূর কোথায়? এ যে হাতির শুঁড় রয়েছে!’ মেয়ের কথা শুনে মা-ও তাজ্জব। তড়িঘড়ি গিয়ে তিনি দেখেন এ যে বিশ্বকর্মা!
ম্যাজিক৷ শ্বশুরমশাইয়ের কিনে আনা কার্তিক হয়ে গিয়েছে বিশ্বকর্মা। ঠিক যেমন ম্যাজিক শো-য়ে হয়৷ জাদুকরের হাতের কারিকুরিতে বিড়ালও রুমাল হয়ে যায়। এখানেও কি তেমনটাই ঘটেছে? মৃৎশিল্পীর হাতের জাদুতে বিশ্বকর্মাই এখন কার্তিক মূর্তি।
বর্ধমান শহরের পিরপুকুর এলাকার বাসিন্দা পূজা মজুমদার৷ কার্তিকের পরিবর্তিত মূর্তি দেখে প্রচণ্ড রেগে যান বউমা পূজা। শ্বশুরমশাইকে ফোন করে ডেকে আনেন৷ বাড়ি ফিরে তিনিও অবাক। সঙ্গে সঙ্গে বউমাকে নিয়ে ছোটেন কার্জন গেট চত্বরে। সেখান থেকেই তো তিনি কার্তিক কিনেছিলেন। সেখানে গিয়ে অবাক হওয়ার পালা। পরপর সাজানো রয়েছে বিশ্বকর্মা। আর সেগুলিই বিক্রি করা হচ্ছে কার্তিক বলে। শুধুমাত্র বাহন হাতির মুখটা জরির কাপড় দিয়ে আড়াল করে দেওয়া হচ্ছে।
[এইভাবেই ১৯ বছর আগে তেহট্টে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো]
শুধু তাঁরাই নন, শনিবার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন আরও কয়েকজন ক্রেতা। এই নিয়ে এদিন কার্জন গেট চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পূজাদেবী বলেন, “বিশ্বকর্মা পুজোয় যে মূর্তিগুলি বিক্রি হয়নি সেগুলি নিয়ে এসেছে। তারপর হাতিটিকে আড়াল করে কার্তিক বলে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি গিয়ে আমার মেয়ে ময়ূর দেখতে চাওয়ায় বুঝতে পারি কার্তিকের বদলে বিশ্বকর্মা দেওয়া হয়েছে।” যদিও বিক্রেতা অনিতা পাল দাবি করেন, কম টাকায় কিনতে চাইলে বিশ্বকর্মার মূর্তি কার্তিক করে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের জানিয়েই তা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা এক যুবকও জানান, বিশ্বকর্মার মূর্তি আর কার্তিকের মূর্তির খুব বেশি তফাৎ হয় না। যাঁরা কম টাকায় কিনতে চান তাঁদের ওই বিশ্বকর্মার মূর্তিকেই কার্তিক করে দেওয়া হয়।
[সমুদ্রপাড়ে থিয়েটার উপভোগ করতে এই জায়গায় আপনাকে যেতেই হবে]
এদিন গলসি থেকে এসেছিলেন অতুল হুই। তিনি বলেন, “প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমাকেও বিশ্বকর্মার মূর্তি দিয়েছিল। কার্তিক ভেবে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই ভদ্রমহিলা এসে চিৎকার করায় বুঝতে পারি আমিও প্রতারিত হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতাকে চেপে ধরি। বদলে দিয়েছে মূর্তি।” পূজাদেবীও বিক্রেতার কাছ থেকে মূর্তির দাম ফেরত নিয়েছেন। মৃৎশিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, দেবতাদের মূর্তির মুখের ছাঁচ প্রায় একই থাকে। শুধুমাত্র শরীরের বিভিন্ন অংশ ও বাহনের পার্থক্য থাকে। বিশ্বকর্মার মূর্তিগুলিই একাংশ কম দামে বিক্রি করতে এই অসাধু উপায় নেওয়া হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.