সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ডেঙ্গু মোকাবিলায় এবার কন্যাশ্রীদের ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতার প্রচার করা হবে। একইসঙ্গে নিজের বাড়ি ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক মশাতে জন্মাতে না পারে তার জন্যও কাজ করবে কন্যাশ্রীর সুবিধাপ্রাপ্ত ছাত্রীরা। নিজের নিজের এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়তা করবে তারা। এর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিটি জেলা ও কলকাতা পুর এলাকার জন্য মোট ৪ কোটি ৩৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের যুগ্ম সচিব রূপম বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকাও পাঠিয়েছেন জেলায় জেলায়। সেখানে বলা হয়েছে ব্লক স্তরে কর্মসূচির জন্য এক লক্ষ টাকা করে ও পুর এলাকার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা স্তরের কর্মসূচির জন্যও এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার কোর গ্রুপ এবং নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রথম মাসিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি জেলাকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্তদের ডেঙ্গু সচেতনতার কাজে ব্যবহার করার জন্য। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের সচিব গত ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য দপ্তরে এই সংক্রান্ত খরচের বাজেট জমা দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে তা অনুমোদন হয়েছে। প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতির খাতে বাজেটের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় কন্যাশ্রীদের দিয়ে দ্রুত সচেতনতার প্রচার করার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খাতে সব থেকে বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জন্য। ওই জেলা পাচ্ছে ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সাড়ে ৩৩ লক্ষ, মুর্শিদাবাদ সাড়ে ৩০ লক্ষ, পূর্ব মেদিনীপুর সাড়ে ২৮ লক্ষ, পূর্ব বর্ধমান ২৭ লক্ষ, পশ্চিম মেদিনীপুর সাড়ে ২৬ লক্ষ, হুগলি ২৬ লক্ষ, পশ্চিম বর্ধমান ১২ লক্ষ, পুরুলিয়া সাড়ে ২২ লক্ষ, নদিয়া ২৩ লক্ষ, বাঁকুড়া সাড়ে ২৪ লক্ষ, আলিপুরদুয়ার সাড়ে ৭ লক্ষ, বীরভূম ২৩ লক্ষ, কোচবিহার ১৬ লক্ষ, দক্ষিণ দিনাজপুর ১০ লক্ষ, দার্জিলিং (জিটিএ) সাড়ে ৭ লক্ষ, হাওড়া সাড়ে ১৭ লক্ষ, জলপাইগুড়ি সাড়ে ৯ লক্ষ, ঝাড়গ্রাম সাড়ে ৯ লক্ষ, কালিম্পং সাড়ে ৪ লক্ষ, মালদহ ১৭ লক্ষ, শিলিগুড়ি সাড়ে ৬ লক্ষ, উত্তর দিনাজপুর ১২ লক্ষ ও কলকাতা পুরসভা ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে পাচ্ছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা আগেই কন্যাশ্রীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতায় কাজ শুরু করে। নাবালিকার বিবাহ রুখতে এখানকার কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যরা রাজ্যে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কৃতও করেন কন্যাশ্রী ক্লাবকে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণে ও সচেতনতার প্রচারে আগেই জেলা প্রশাসন কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদের ব্যবহার করেছে। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিটি ব্লকে কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি সচেতনতার প্রচার করা হবে। কোথাও যাতে জল জমে মশার বংশবিস্তার না ঘটে সেদিকে নজর রাখা, পারিপার্শ্বিক এলাকা পরিষ্কার রাখা, মশারি টাঙিয়ে শোয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার করবে কন্যাশ্রীরা। একইভাবে পুর এলাকাতেও প্রচার করবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার কথায়, “কন্যাশ্রীরা প্রচার করলে মানুষের মনে ভাল প্রভাব পড়বে। পাশের বাড়ির মেয়েই যদি সচেতনতার কথা বলে তাহলে মানুষের মনে দাগ কাটবে। এর ফলে ডেঙ্গুর সম্ভাবনাও কম হবে।” চলতি মরশুমে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৬ জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর রয়েছে। যা খুবই কম গত কয়েকটি মরশুমের তুলনায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.