সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ঝড়ের আগে কান্তি আসে’, ম্যানগ্রোভ, কাদামাটি আর নোনা জলের দেশে একথা কার্যত প্রবাদের রূপ নিয়েছে। ‘রেমাল’ দৈত্য যখন ধীরে ধীরে তার দাঁত-নখ বের করতে শুরু করেছে, তখন নদীপাড়ের অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে ফের হাজির ‘সুপার হিরো’ কান্তি বুড়ো। পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও ধুতি, কাঁধে ফেলা গামছা। এক হাতে ছাতা ও অন্য হাতে ধুতির খুঁট, নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলেছেন তিনি। নজর রাখছেন গোটা পরিস্থিতির উপর। সতর্কবার্তা দিচ্ছেন গ্রামবাসীদের। সব মিলিয়ে ঝড়ের আগে সুন্দরবনের মাটিতে ফের দেখা গেল চেনা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে।
ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষের পাশে থাকা যায়, একথা রাজনৈতিক নেতাদের চোখে আঙুল দিয়ে বার বার দেখিয়ে দিয়েছেন অশীতিপর কান্তি। আমফান, বুলবুল, কিংবা ইয়াসের সময়ও সুন্দরবনবাসীকে রক্ষা করতে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। এবার রেমালের কথা মাথায় রেখে রায়দিঘিতে সেফ হাউস খুলেছেন কান্তিবাবু। সেখানে আশ্রয় নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বৃষ্টি মাথায় করে সেই সেফ হাউস দেখাশোনার কাজে নেমে পড়েছেন বর্সীয়ান বাম নেতা। নদীর পাড়ে গিয়ে বুঝে নিচ্ছেন পরিস্থিতি কতটা খারাপ আকার নিতে পারে। সেই মতো গ্রামবাসীদের বার্তা দিচ্ছেন, মানুষ ও গবাধি পশুর সুরক্ষায়।
পাশাপাশি এক ভিডিও বার্তাও পোস্ট করেছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষকে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “গত ৩০ বছর ধরে সুন্দরবনের ঝড়-ঝঞ্ঝার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি। ২০০৯ সালের ২৬ মে আয়লা আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনের বুকে। আজও সেই ২৬ মে। আমি তো সরকারে নেই তাই আশেপাশের মানুষের সাহায্য নিয়ে যতটা সম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি।” কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছে তাঁরা। ত্রাণের পাশাপাশি ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপলের। দুর্যোগ মোকাবিলায় পুরোদমে মাঠে নেমেছে সরকারও। কান্তি অবশ্য বলেন, “রাজ্য সরকার সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলছে। কিন্তু আমি তা লক্ষ্য করছি না। আমার মনে হয় প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।”
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের (Remal) ল্যান্ডফলের সময় যত এগিয়ে আসছে, তত রাজ্যজুড়ে খারাপ হচ্ছে আবহাওয়া। প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সঙ্গে চলছে দমকা হাওয়া। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। অন্যান্য জেলায় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে কলকাতা পুলিশও। নম্বর দুটি হল ৯৪৩৬১০৪২৮ এবং ৯৪৩২৬ ১০৪২৯। এছাড়াও দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ তহবিল গঠন করেছে রাজ্য সরকার। দুর্যোগ সামলাতে সব জেলাকেই এই তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ বঙ্গের প্রতিটি জেলার প্রশাসনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে নবান্ন (Nabanna) থেকে। সেচ, বিদ্যুৎ, কৃষি, পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমন্বয় রেখে চলেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সব জেলাতেই ত্রাণ সামগ্রী তৈরি রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.