বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: হাসপাতালের বেডে মোটামুটি সুস্থ অবস্থাতেই ছিলেন করোনা (Corona Virus) আক্রান্ত রোগী। অথচ সেই রোগীকে ‘মৃত’ জেনে তাঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতালের বাইরে বসে কান্নাকাটি করছিলেন। তাঁদের হাতে তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ওই রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট! চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কল্যাণীর নেতাজি সুভাষ স্যানেটোরিয়াম (NSS) কোভিড হাসপাতালে। ওই রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট (Death Certificate) ইস্যু করার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকেই খবর দেওয়া হয়েছিল ডোমকে। খবর দেওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে সৎকারের জন্য লোক এসে মৃতদেহ আনতে যান। অথচ মৃতদেহ আনতে গিয়ে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। ‘মৃত’ রোগী তখন বেডের উপর বসে। তা দেখে স্বভাবতই কিছুটা বিরক্ত হয়ে পড়েন ডোম। বাইরে এসে তিনি তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করেন ওই রোগীর বাড়ির লোকজনের কাছে। মেজাজ হারিয়ে বলেন, “আপনাদের রোগী তো দিব্যি বেঁচে রয়েছে। অযথা আমাদের খাটাচ্ছেন।”
ডোম হাসপাতাল থেকে চলে গেলে রাগ আর বিস্ময়ে ওই রোগীর বাড়ির লোকজনের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপরে। চেঁচামেচি জুড়ে দেন তাঁরা। টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর বাড়ির লোকজনকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে রোগীকে দেখানোর ব্যবস্থা করে। রোগীকে জীবিত দেখে প্রথমটায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে পরিবার। কিন্তু পরক্ষণেই একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করে তাঁদের। তাঁরা আর রোগীকে এই হাসপাতালে রাখতে রাজি হননি। কারণ যে হাসপাতাল জীবিতকে মৃত বলে ঘোষণা করতে পারে, সেখানকার চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সত্যিই প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। শুক্রবার রাতেই তাঁরা রোগীকে বাড়ি নিয়ে আসেন। তবে আতঙ্কের কারণ একটি নয়, একাধিক। জীবিত রোগীকে মৃত বলে দেখিয়ে যে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, সেই ডেথ সার্টিফিকেটে ওই রোগীর জীবিত বাবাকেও মৃত বলে লেখা হয়েছে!
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগীর নাম সুব্রত কর্মকার। বয়স ২৬ বছর। বাড়ি ধানতলা থানার হিজুলির ঘোষের মোড় এলাকায়। জ্বর ও বুকে ব্যথা নিয়ে সুব্রতকে ১০ মে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১২ মে রাতে তাঁকে কল্যাণীর (Kalyani) হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন বাড়ির লোকেরা। সুব্রতর ভাই সঞ্জীব কর্মকার জানিয়েছেন, ১৪ মে সকালে ওই হাসপাতাল থেকে এক নার্স তাঁদের ফোন করে জানান, দাদা মারা গিয়েছে। শুনেই তড়িঘড়ি তখন গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু গিয়েই দাদার দেখা মেলেনি। সন্ধে নাগাদ সুব্রতর ডেথ সার্টিফিকেট পরিবারের হাতে দেওয়া হয়। তার কিছুক্ষণ পরেই আসে ডোম। ডোম দেখে এসে সঞ্জীবদের জানান, সুব্রত বেঁচে আছেন।
সঞ্জীবের কথায়, “একজন জীবিত রোগীকে মৃত দেখিয়ে আমাদের যেভাবে হয়রান করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ডেথ সার্টিফিকেটে আমার জীবিত বাবাকেও মৃত বলে লেখা হয়েছে। যদিও আতঙ্কে আমরা আর দাদাকে ওই হাসপাতালে রাখার সাহস পাইনি। এই ভেবে, যদি ওরা কোনও ওষুধ খাইয়ে বা ইঞ্জেকশন দিয়ে দাদাকে মেরে ফেলে। তাই আমরা দাদাকে বাড়িতে নিয়ে আসি।” সুব্রতর বাবা সত্যরঞ্জন কর্মকার বলছেন, “ছেলে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য আমাদের চরম ভোগান্তি হল।”
যদিও কীভাবে এমন মারাত্মক ভুল হল, সে বিষয়ে কল্যাণীর মহকুমাশাসক হীরক মণ্ডলের বক্তব্য, “বিষয়টা আমি শুনেছি। আমি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেছি, বিষয়টা আমাকে বিস্তারিত জানাতে।” এ বিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “হ্যাঁ, একটা ভুল হয়েছে। তার কারণ একই নামে দুজন রোগী প্রায় একই সময়ে ওই হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। একদম এক নামে। একই ডকুমেন্টে দুই রোগী ভরতি হয়েছিলেন। যার ফলে ঘটেছে এই কেলেঙ্কারি। এটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। তবে এটা হওয়া উচিত ছিল না।” যদিও প্রশ্ন উঠছে, জীবিত সুব্রত কর্মকারের বাবার নাম ও ঠিকানাও কি অন্য লোকের সঙ্গে মিল ছিল? সেই উত্তর এখনও মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.