মৃত ফুটবলার রিপন মালি. ছবি: মোহন সাহা।
রিন্টু ব্রহ্ম, বর্ধমান: ফের মাঠেই মৃত্যু ফুটবলারের। গোল বাঁচাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংঘর্ষে তরুণ ফুটবলারের মৃত্যু হল। মৃতের নাম রিপন মালি(১৮)। রবিবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। রিপনের মৃত্যু উসকে দিল কয়েক মাস আগের ভয়াবহ স্মৃতি। গত ২৭ মে এই বর্ধমানের খণ্ডঘোষের কৈয়র গ্রামে নেমেছিল শোকের ছায়া। ক্যাচ ধরতে গিয়ে সহ-খেলোয়াড়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন তরুণ ক্রিকেটার। ফের একই বিপর্যয় ঘটল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এদিন বিকেলে গ্রামের মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। স্থানীয় ক্লাবের হয়ে সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন রিপন। প্রথম থেকেই দারুণ পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কেড়ে নেন দর্শকদের। বাজপাখির মত ছোঁ মেরে বিপক্ষের স্ট্রাইকারের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে হেড দেওয়ার আগেই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সেভ করা, সবেতেই এগিয়ে রিপন। তবে তাতেই বিপত্তি ঘটল। এমনই এক এরিয়াল বল ফিস্ট করতে উঠে আচমকাই পড়ে গেলেন ওই যুবক। আর ওঠেননি। খেলার মাঝপথে লাফিয়ে বল ফিস্ট করার সময় বিপক্ষ ডাক্তার একাদশের এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। বডি কনট্যাক্ট গেমে সচরাচর এমনটাই ঘটে থাকে।পড়ে যাওয়ার পর সবাই ভেবেছিলেন উঠে দাঁড়াবেন রিপন। কয়েক মিনিট কাটলেও পরিস্থিতির কোনও অদলবদল ঘটল না। ততক্ষণে খেলা বন্ধ করে দিয়েছেন রেফারি। মাঠে ঢুকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। সহ-খেলায়াড়রা অচৈতন্য রিপনকে নিয়ে স্থানীয় মধুপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটলেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কালনা মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা হলেও তরুণ ফুটবলারের জ্ঞান ফেরেনি। এক সময় বাধ্য হয়েই হাল ছেড়ে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। হাসপাতালের তরফে রাতে রিপনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পাড়ার প্রিয় ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে নিশ্চিন্তপুরে। শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন রিপনের বাবা-মাও। মামা সুভাষ মালাকার জানান, পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও খেলার প্রতি পাগলামিটা যায়নি। এতে সায় ছিল না পেশায় ক্ষেতমজুর বাবা তপন মালির। বড় ছেলে কাজ করে সংসারের হাল ধরুক এমনটাই চাইতেন তিনি। তবুও বাড়ির অমতেই বিভিন্ন জায়গায় খেপ খেলতেন তিনি। ভাল খেলার জন্য সবাই ডাকত। কিন্তু সেই খেলার মাঠই যে তাঁর মৃত্যু ডেকে আনবে কেইবা ভেবেছিল। প্রাণবন্ত ছেলেকে হারিয়ে এদিন হাসপাতাল চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মানিক-মিঠুনরা। এরাই তাঁর খেলার সঙ্গী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.