ছবি: প্রতীকী।
অভিষেক চৌধুরী, কালনা: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীকে খুনের চেষ্টা। কাঠগড়ায় স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিকের। মঙ্গলবার রাতে মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামে এই ঘটনার জেরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে যান স্বামী। এরপরই ওই প্রেমিককে ধরে মারধর করে স্থানীয়রা। বুধবার সকালে আক্রান্ত স্বামী ও জখম প্রেমিককে মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর প্রেমিকের বাড়ির লোকজন হাসপাতালে আসতেই দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি, এমনকী হাতহাতিও বেঁধে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে পুলিশ অভিযুক্ত প্রেমিক সাদ্দাম শেখ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের থানায় তুলে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামের বাসিন্দা মণিরুল মণ্ডল। প্রায় ৯ বছর আগে কালনার বুলবুলিতলা থানা এলাকার বাসিন্দা ডলি বিবির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের একটি সাত বছরের পুত্র সন্তানও রয়েছে। মণিরুল দিল্লিতে দোকানে কাজ করলেও ৩ মাস আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। বর্তমানে এলাকায় টোটো চালান। মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়িতেই মণিরুলকে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলে বাড়িরই একটি ঘরে তাঁর হাত-পা শক্ত করে বেঁধে ফেলে রাখে তাঁর স্ত্রী। এরপরই ডলি ও তাঁর প্রেমিক সাদ্দাম, মণিরুলের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
মণিরুল জানান, “রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমার স্ত্রী হাত-পা টিপতে টিপতে হঠাৎ করে আমার হাত ও পা দু’টি শক্ত করে বেঁধে দেয়। আর তখনই সন্দেহ হয়। যদিও এর আগে স্ত্রী আমাকে ঠাণ্ডা দুধ খেতে দেয়। তা খেয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। মনে হয়, ও-ই দুধেই কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপরেই স্ত্রী ও ওই যুবকটি আমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টা করতেই আমি জোর ঠেলা দিই। প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা করি। চিৎকার করি। তা শুনেই আমার পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে।” আক্রান্তের ভাই রেজাবুল মণ্ডল বলেন,“দাদার চিৎকার শুনে ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখি দাদার হাত ও পা বাঁধা রয়েছে। পাশেই তখন বউদি দাদাকে ধরে রয়েছে। দাদা খাটের তলায় ইশারা করতেই দেখি ওই যুবকটি খাটের তলায় মাদুর চাপা দিয়ে রয়েছে।” দম্পতির ছেলে কবীর মণ্ডল জানায়,“মা ওই ছেলেটির সঙ্গে ফোনে কথা বলত। এই কথা বাবাকে জানাব বললেই মা আমাকে মেরে ফেলবে বলত।”
মুর্শিদাবাদের কাশীপুরের বাসিন্দা সাদ্দাম শেখকে এর আগে মণিরুল ও তার পরিবারের কেউই দেখেননি বলে জানান। ডলি ও সাদ্দাম জানায়, ভুল করে একে অপরের ফোন নম্বরে ফোন চলে যাওয়ায় তাদের ফোনে আলাপ। দু-আড়াই বছর ধরে তাঁরা ফোনেই গল্প করেন। সেই থেকেই প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। এরপর রাতের অন্ধকারে দেখা করতে এসেই এই ঘটনা ঘটে। ডলি বিবি বলেন,“আমার স্বামী আমার সঙ্গে ভাল করে কথা বলত না। ইদানিং খুব অবহেলা করত। স্বামীর বয়স বেশি। পা ভাঙা। তা সত্বেও ছেলে নিয়ে সংসার করছিলাম। ওর খারাপ ব্যবহার আমাকে আঘাত করত। সাদ্দামের সঙ্গে আমার ফোনে পরিচয়। কথা বলতাম। ভাল লাগত। আমার সঙ্গে দেখা করার জন্যই সাদ্দাম এসেছিল। আমাদের দু-আড়াই বছরের সম্পর্ক।” সাদ্দাম জানান, “রাত ১২ টা নাগাদ আমি ওদের বাড়িতে যাই। বাড়ির গ্রিল খোলা ছিল। ওর স্বামীর শরীর খারাপ। কিছু টাকা দিতে গিয়েছিলাম। এটা আমার ভুল হয়েছে।” যদিও হাত পা বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টার ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন দুজনেই। এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.