অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ছিল রুমাল হল বিড়াল! রাতারাতি বদলে গেল সম্পর্কের সব সমীকরণ। স্ত্রী গেলেন নাতনি! প্রৌঢ়ের দাবি ঘিরে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়াল পূর্ব বর্ধমানের কালনায়। ওই প্রৌঢ়ের এমন আচরণ ও অসংলগ্ন বক্তব্যে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে দুজনে একসঙ্গে থাকতেন। পরিচয় দিয়েছিলেন স্ত্রী হিসেবে। অথচ মৃত্যুর পর সেই মহিলাকেই নিজের নাতনি বলে পরিচয় দিলেন প্রৌঢ়!
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে কালনার সুলতানপুরের ধেরেপাড়া এলাকায় ধান কাটার কাজ করতে আসেন মুর্শিদাবাদ জেলার তিলডাঙি এলাকার বাসিন্দা রবি দাস। তাঁর সঙ্গে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সি এক মহিলাও আসেন। তাঁরা নির্মীয়মান একটি বাড়িতে আরও দুই শ্রমিককে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। মঙ্গলবার সকালে সকলে কাজে চলে গেলেও ওই মহিলা শারীরিক অসুস্থতার কারণে যাননি। এর পরে ওই বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থা তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতা মহিলার নাম পরিচয় সম্পূর্ণভাবে এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম চম্পা। এই ঘটনায় এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও পুলিশ এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করেছে।
স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে থাকা রবি দাস তাঁকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন। এমনকী তাঁকে চেনেন না বলেও প্রথমে দাবি করে। তাঁর এমন বক্তব্য ঘিরে চরম বিভ্রান্তি ছড়ায়। যে মালিকপক্ষের ধান কাটতে তাঁরা এই এলাকায় এসেছিলেন, তাঁদেরই একজন রাজা মাপদার জানান, “ওরা কয়েকজন মিলে এখানে ধান কাটতে আসে। রবি দাস নামের ওই শ্রমিক ওই মহিলাকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে থাকতে শুরু করে।” তিনি আরও জানান, “এদিন সকাল পৌনে ছটা নাগাদ ওদের কাজে যাওয়ার জন্য বলি। কিন্তু ওই মহিলা জানায়, ওঁর ঘাড়ে যন্ত্রণা হচ্ছে, ওঁ কাজে যাবে না। ওই মহিলা কাজে যায়নি।”
স্থানীয়দের অনুমান, রবি ও চম্পার মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। আর তার পরেই এই ঘটনা ঘটে। যদিও রবি দাস নামের ওই ব্যক্তি প্রথমে জানায়, “ওই মহিলা আমার কেউ নয়। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই।” যদিও তার পরেই তিনি জানান,“আমি ওই মহিলাকে নিয়ে এক ঘরে থাকতাম। ৪ দিন ধরে ছিলাম। বাকি ২ জন পাশের ঘরে থাকত। বর্ধমানে ওই মহিলার সাথে আমার দুদিনের পরিচয়। ও আমাকে দাদু বলত। ধান কাটতে যাবে বলেছিল। এরপর বর্ধমান রেল স্টেশন থেকে ওকে নিয়ে আসি। এদিন মাঠ থেকে ফিরে খাবার খেতে এসে ওকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখি। কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।” একই বাড়িতে ওদের সঙ্গে থাকা আরও দুই যুবকের দাবি, “ওই মহিলা রবি দাস নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে এক ঘরে থাকত স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে। এখন ওই ব্যক্তি কথা লুকোচ্ছেন। আমরাও বর্ধমান থেকে এসেছি। ওই মহিলাকে আমরা চিনি না।তবে ওই মহিলা এখানে থাকতে চাইছিল না।” কালনা হাসপাতালের মর্গে এদিন মৃতদেহ নিয়ে এলেও ময়নাতদন্ত হয়নি। বুধবার হবে বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.