চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: অতৃপ্ত আত্মাদের পিণ্ডদান করে মুক্তি দেওয়া। অবিকল গয়ায় যেমনটা হয়। তবে কালীপুজোর সময়ে এক বিশেষ তিথিতে চলে পিণ্ডদান পর্ব। আসানসোলের (Asansol) কালীপাহাড়ির এই কুয়ো ‘প্রেত কুয়ো’ নামে পরিচিত। বন্দি থাকা ভূত, পিশাচদের নাকি মুক্তি দেওয়া হয় পুজোর কুম্ভযজ্ঞ তিথিতে। এমনটাই দাবি ‘বিশ্বগয়া মা কালীবুড়ি’ মন্দিরের তান্ত্রিকের। তাঁর এই কথা যুক্তিবাদী মানুষজন মানেন না। কিন্তু কালীপুজোর রাতে বিশ্বগয়া কালীবুড়ি মন্দিরে ঘটনার সাক্ষী হতে ভিড় জমান স্থানীয়রা। এই সময় আসানসোলের কালীপাহাড়ি হয়ে ওঠে আরেক গয়াক্ষেত্র।
কালীপুজোর (Kali Puja) আগের দিন ভূত চতুর্দশী। ঠিক সেই সময় থেকেই ভূত প্রেতদের নিয়ে তন্ত্রমন্ত্রের চর্চা জোরদার হয়ে ওঠে আসানসোলের এই মন্দিরে। দু’নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এই মন্দির চত্বরেই রয়েছে এক কুয়ো। কুয়োর মুখটি খাঁচাবন্দি। কুয়োর গায়ে লেখা ‘প্রেত কুয়ো’। কী হয় এখানে? এখানকার তান্ত্রিক প্রদীপ বাবার দাবি, জাতীয় সড়কের ধারে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বা স্থানীয় কারও অপঘাতে মৃত্যু হলে, সেই অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এলাকায়। পথচলতি মানুষের উপর সেই আত্মা ভর করলে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই তাদের মন্ত্রবলে ওই কুয়োর মধ্যে আটকে রাখা হয়। তিনি জানান, কালীপুজোর সময় বিশেষ তিথি দেখে মহাকুম্ভ যজ্ঞা করা হয়। সেই যজ্ঞের পর কুয়োয় পিণ্ডদান করে ওই প্রেতদের মুক্তি দেওয়া হয়।
এসব অলৌকিক দাবি কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? তান্ত্রিকের দাবি, কালীপুজো মানেই তো শক্তির উপাসনা। কালী মূর্তির পাশেই দেখা যায় ডাকিনী-যোগিনী বা ভূত-পিশাচদের। তাঁর পালটা প্রশ্ন, যদি মা কালীকে শ্রদ্ধা-ভক্তিভরে সবাই পুজো করেন, তবে ভূত-পিশাচ বা প্রেতের অস্তিত্ব মানতে অসুবিধা কোথায়? দেবতাকে মানলে অপদেবতাকেও বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু যুক্তিবাদী সংগঠন বা বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষজন একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ তাঁর এই ব্যাখ্যা৷ তবু গা-ছমছমে অলৌকিক কাহিনির টানেই হোক বা ভক্তিতে, প্রতি বছর কালীপুজোয় বিশেষ তন্ত্রসাধনা দেখতে ভিড় জমান কালীপাহাড়ির বাসিন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.