ছবি: জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: কালীর চিরাচরিত রূপ নয়, পাথরের তৈরি অষ্টভুজা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ মূর্তিই কালীরূপে পুজো হয়ে আসছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কালিকাপুর গ্রামে। সারাবছর এই মূর্তিই আবার ‘জয়দুর্গা’ হিসাবে পুজো করা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মহিষাসুরমর্দিনীকেই কালীরূপে পুজো করা হয়। এই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর মহাপুজো। কালিকাপুর গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কয়েক শতাব্দী ধরে নানারূপে পূজিতা হয়ে আসছেন। জানা যায়, কালীর নাম অনুসারেই গ্রামের নাম হয়েছে কালিকাপুর। কতকাল আগে এই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল? কার হাতেই বা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই গ্রামবাসীদের।
কাটোয়ার প্রাচীন এক জনপদ কালিকাপুর গ্রাম। এই গ্রামের কালী নিয়ে এলাকায় রয়েছে এক জনশ্রুতি। কালিকাপুর থেকে বেশ কিছুটা দূরে রয়েছে কুমরি গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমরি নদী। এটি ‘কুমরির বিল’ নামেও এলাকায় পরিচিত। শোনা যায়, কালিকাপুর গ্রামের এক পূজারী ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে কুমরি নদী থেকে দেবীমূর্তি তুলে এনে নিজের গ্রাম কালিকাপুরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পর থেকেই এই মূর্তিপুজো চলে আসছে।
যদিও পাথরের তৈরি এই মূর্তিটি কতকালের পুরনো, তার কোনও তথ্য নেই। তবে মূর্তির গঠনশৈলী দেখে অভিজ্ঞ মহল অনুমান করেন, কালিকাপুরের মূর্তিটি পাল-সেন যুগের। পাল যুগের পাথরের তৈরি মূর্তিগুলির সঙ্গে এই মূর্তির বেশ কিছু সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামের একাংশের মতে, বর্তমানে যা কুমরি নদী, আদতে তা সপ্ত মাতৃকার এক মাতৃকা ‘কৌমারী নদী’। কৌমারী নদীর তীরেই এক সময় এই মূর্তির পুজো হত। কালের নিয়মে মন্দির কোনও একসময় ধ্বংস হয়ে যায়। নদীগর্ভে তলিয়ে যায় মূর্তিটি। অনেক পরে অষ্টাদশ শতকের প্রথমদিকে কালিকাপুরের তৎকালীন জমিদার পূজারী ব্রাহ্মণের উদ্ধার করা মূর্তিটি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর পর দেবীর নামেই গ্রামের নাম হয়ে যায় ‘কালিকাপুর’।
জানা যায়, বর্তমানে যে জায়গার উপর মন্দিরটি সেই জায়গা এককালে দান করেছিলেন ধর্মপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রজন্ম পরম্পরায় দেবীর পুজো করে আসছেন। কালিকাপুরে এই কালী ছাড়া অন্য কোনও কালীপুজো করার নিয়ম নেই। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি গ্রামের কোনও কালীপুজোর শোভাযাত্রা কালিকাপুরে ঢোকার অনুমতি নেই। উল্লেখ্য, কুমরি গ্রামের বাসিন্দারাও অন্য কালীমূর্তির পুজো করেন না। মাঘ মাসে কুমরি গ্রামে দেবীর বিশেষ পুজোপাঠ হয়। নিয়ম আছে গ্রামের মহিলারা গঙ্গাস্নান সেরে কলসি করে গঙ্গাজল এনে মন্দিরে জমা করে রাখেন। পুজোয় আমিষ নয়, বিভিন্ন রকমের ভাজা, মুড়ি, চিঁড়ে, চালভাজা ইত্যাদি ভোগ দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.