শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ফের প্রত্যাখ্যান। এনিয়ে দ্বিতীয়বার আসানসোলে ঢুকতে পারলেন না ভোজপুরী স্টার পবন সিং। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে বিজেপির টিকিট পেয়েও নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন পবন। তৃণমূল কংগ্রেস ও বাংলা পক্ষের বিরোধিতায় বিতর্কের মুখে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এবার তৃণমূল বিধায়কের আমন্ত্রণ পেয়েও আসানসোলে অনুষ্ঠান করা হল না পবনের সিংয়ের। তা বাতিল হয়ে গেল। ভোজপুরী নায়ক-গায়ক পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছিল কয়েকদিন ধরেই। সেসবের জেরে এবার আয়োজকদের অনুষ্ঠানই বাতিল করতে হল।
কালীপুজোয় পবন সিংয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন জামুরিয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিং ও তাঁর ছেলে, জেলা যুব তৃণমূল সম্পাদক প্রেমপাল সিংয়ের। শনিবার জামুরিয়ার বিধায়ক কার্যালয়ে প্রেমপাল প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়ে দিলেন অনুষ্ঠান বাতিলের কথা। পাণ্ডবেশ্বরের বহুলায় কালী পুজো উপলক্ষে ৩ নভেম্বর ছিল পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করেছিল বাংলা পক্ষ। সোশাল মিডিয়া জুড়ে চরম ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু হয় এই অনুষ্ঠান নিয়ে। অভিযোগ করা হয়, পবন সিংয়ের গানগুলিতে ভরপুর অশ্লীলতা। তাঁর বিভিন্ন ভিডিও অ্যালবামে বাঙালি মেয়েদের ভোগ্যপণ্য হিসাবে দেখানো হয়েছে বার বার। তাই কোনও মতেই ভোজপুরি গায়ককে আসানসোলে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না। এত বিরোধিতার মুখে কার্যত বিপাকে পড়ে যান তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিং এবং তাঁর ছেলে প্রেমপাল।
শনিবার প্রেমপাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ”একজন শিল্পীর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় হয় না। যখন তিনি অভিনয় করেন বা গান করেন তখন হয়তো কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু শব্দ ব্যবহার করেন, যা হয়তো কারও কারও ভাবাবেগে আঘাত করে থাকতে পারে। কেউ স্ক্রিপ্ট লেখেন, কেউ গান রচনা করেন। চরিত্রের স্বার্থে সেই অভিনয় করতে হয় শিল্পীকে। এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। শুধু পবন নন, যে কোনও অভিনেতা, গায়ক, শিল্পীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বাংলা পক্ষ নামে একটি সংগঠন জাতি বিভাজন করছে। বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এই শিল্পীর পিছনে তাঁরা পড়ে গেছেন, যা ঠিক নয়। এই রাজ্যে বাঙালি, বিহারি, মুসলিম বলে কিছু নেই। আমাদের এখানেই জন্ম, এখানেই কর্ম। আমরা সবাই হিন্দিভাষী বাঙালি।” প্রেমপালের দাবি, বিতর্কের জন্য তাঁরা অনুষ্ঠান বাতিল করছেন না। এত বড় একজন ‘স্টার’-এর নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। যে মাঠে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা, সেই মাঠে জায়গাও পর্যাপ্ত নয়। প্রশাসনের তরফ থেকে সে কথা জানানো হয়েছে। তাই ভোজপুরি গায়ক পবন সিং সহ অন্যান্য দিনের অনুষ্ঠানগুলিও বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র এবছর পুজো হবে, মেলাও বসবে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর কথায়, ”আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা সবাই ভারতীয়। একজন ভোজপুরী শিল্পী বা অন্য ভাষার মানুষ পশ্চিমবাংলায় অনুষ্ঠান করতে পারবেন না, এই সংস্কৃতি আগে ছিল না। এই সংস্কৃতির আমদানি করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বি টিম বাংলা পক্ষ।” একইভাবে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে পবন প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গটি। অগ্নিমিত্রার দাবি, ”তখন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই শিল্পীর নামে কুৎসা করা হয়েছিল। আমার প্রশ্ন এই শিল্পী যদি এতটাই খারাপ, তাহলে তৃণমূল বিধায়ক তাকে আমন্ত্রণ করতে গেলেন কেন?”
সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় পবন সিং একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৩ নভেম্বর তিনি জামুরিয়ার বহুলা এলাকায় স্থানীয় বিধায়ক হরেরাম সিং এবং তাঁর ছেলে তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সম্পাদক প্রেমপাল সিংয়ের আমন্ত্রণে তিনি অনুষ্ঠান করতে আসছেন। এই ভিডিও প্রকাশের পরেই বিতর্ক তৈরি হয়। যে তৃণমূল পবন সিংয়ের এত বিরোধিতা করেছিল, সেই শাসকদলেরই বিধায়ক হরেরাম সিং কী করে পবনকে কালীপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন? সোশাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করে এই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় পবন সিংয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.