মা হংসেশ্বরী।
সুমন করাতি, হুগলি: সামনে বাগান। একটু হাঁটলেই ৭০ ফুট উচ্চতার, ১৩টি চূড়া বিশিষ্ট ছ’তলা মন্দির। সারা বছর মা এখানে পূজিতা দক্ষিণাকালী রূপে। দীপান্বিতা অমাবস্যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য মা হংসেশ্বরীকে সাজানো হয় রাজবেশে। মায়ের রূপও কিছুটা আলাদা। দেবী এখানে চর্তুভুজা, পদ্মাসনে অধিষ্ঠান করছেন। মায়ের এক পা ভাঁজ করে রাখা। অন্য পা মহাদেবের বুক পর্যন্ত ঝুলন্ত। কথিত আছে রামকৃষ্ণদেব মায়ের টানে এখানে বারংবার ছুটে এসেছেন।
২০৯ বছরের পুরনো হুগলির বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মায়ের পুজো(Kali Puja 2024)। রাজা নৃসিংহদেব রায় এই মন্দিরের নির্মাণকার্য শুরু করেন। ১৮০২ সালে মন্দিরের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে তিনি মারা যান। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রানি শংকরী অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন। জানা যায়, মন্দিরটি তৈরির জন্য উত্তরপ্রদেশের চুনার থেকে পাথর এবং রাজস্থানের জয়পুর থেকে কারিগরদের নিয়ে আসা হয়।
মন্দিরের গঠন আর পাঁচটা কালী মন্দিরের থেকে আলাদা। মনে করা হয়, ষটচক্র তত্ত্বকে অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়েছিল। যোগশাস্ত্র অনুযায়ী, মানুষের শরীরে সুষুম্নাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রয়েছে সাতটি চক্র। সর্বনিম্ন চক্রটির নাম মূলাধার চক্র। এই মূলাধার চক্রেই সুপ্ত থাকে সর্পাকৃতি কুলকুণ্ডলিনী। রাজা নরসিংহ দেব এই কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকেই হংসেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন। পরে সেই ভাবেই মন্দির গড়ে ওঠে।
মন্দিরের গর্ভগৃহে পাথরের বেদীর উপর খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে অষ্টদল পদ্ম। তার উপরে শায়িত শিব। মহাদেবের হৃদয় থেকে উত্থিত পদ্মাসনে অধিষ্ঠান করছেন মা হংসেশ্বরী। মন্দিরের গর্ভগৃহকেই ধরা হয় মূলাধার। এছাড়াও তন্ত্রমতে মানবদেহের পাঁচটি নাড়ির মতো এই মন্দিরে রয়েছে পাঁচটি সিঁড়ি। কালীমূর্তির সঙ্গে মন্দিরের তিন তলায় রয়েছে কষ্টিপাথরের ১২টি শিবলিঙ্গ।
সারা বছর মায়ের পুজো হয় পূর্বের প্রথা মেনেই। গত বছরও এই মন্দিরে ছাগবলি হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছর বলি হবে না। পরিবারের সদস্য সুমন চক্রবর্তী বলেন, “মা সারা বছর এখানে শান্তরূপে পূজিত হন। শুধু কালীপুজোর দিন সন্ধ্যা আরতির পর কয়েক ঘণ্টার জন্য রাজবেশ ধারণ করেন। ফুল ও অলংকারে সাজানো হয় মাকে। ভোর চারটের সময় ফের আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে একই নিয়মে পুজো হয়ে আসছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.