Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kali puja 2024

হত নরবলি, রঘু ডাকাতের খপ্পরে পড়েন রামপ্রসাদও! হুগলির ডাকাতকালী পুজো জুড়ে বহু ইতিহাস

মায়ের ভোগে আজও দেওয়া হয় পোড়া ল্যাটা মাছের ভোগ।

Kali puja 2024: Kali Puja of Dakat bari of Hooghly
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:October 23, 2024 7:58 pm
  • Updated:October 23, 2024 7:58 pm  

সুমন করাতি, হুগলি: চারপাশ গাছে ঘেরা। আলোছায়ার অদ্ভুত পরিবেশ। অদূরে বইছে নদী। পাঁচিল ঘেরা জমির মাঝখানে দুটি বহুজীবী গাছ ঘেরা একচূড়া বিশিষ্ট কালী মন্দির। প্রকৃতির নীরবতা ভেঙে যাচ্ছে মিস্ত্রিদের কাজের শব্দে। জোরকদমে কাজ চলছে। নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে মন্দির। দীপান্বিতা অমাবস্যার বাকি হাতে গোনা কদিন। পুজোর দিন হুগলির বাঘটি জয়পুর গ্রামের ডাকাত কালীবাড়ি গমগম করবে হাজার হাজার ভক্তের উন্মাদনায়।

কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে নদীতে ডুব দিয়ে দেবী মূর্তি পান রঘু ডাকাত। মন্দিরের এলাকা সেই সময় শ্মশান ছিল! এখানেই মায়ের আরাধনা শুরু করেন বুধো ও রঘু ডাকাত। তবে কালেদিনে তা রঘু ডাকাতের পুজো বলেই পরিচিতি পায়। মা এখানে সিদ্ধেশ্বরী কালী হিসেবে পূজিতা। রঘুর হাতে দেবী পূজা পেতেন ‘সর্বমঙ্গলা’ নামে।

Advertisement

বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের ‘মনসামঙ্গলে’ও এই রঘু ডাকাতের কালীবাড়ির কথা আছে। শোনা যায়, রঘু ডাকাত ও তাঁর দলবল মাকে নরবলি, পোড়া ল্যাটা মাছের ভোগ দিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বেরতেন। এবং ডাকাতিতে লুট করা সম্পত্তি গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। বাংলার গ্রামে এই ‘রবীনহুডে’র জনপ্রিয়তাও নাকি ছিল চোখে পড়ার মতো।

রঘু একাধারে ডাকাত ও সাধক ছিলেন। কথিত আছে, একবার পূর্ববঙ্গের রামশরণ সিমলাই নামের এক বণিক তাঁর যাত্রা পথে দেবীর পুজো দেন। রঘু ডাকাত তাঁকে হাতের কাছে পেয়েও নাকি ফিরে যেতে দিয়েছিলেন। আরও শোনা যায়, এই রঘু ডাকাতের খপ্পরে পড়েন মাতৃভক্ত সাধক রামপ্রসাদ। ডাকাতদল তাঁকে মায়ের সামনে বলি দেওয়ার জন্য ধরে আনে। হাঁড়িকাঠে চড়ানোর আগে রামপ্রসাদ মাকে গান শোনানোর আর্জি জানান। রঘু সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। শোনা যায়, মোহিত হয়ে রামপ্রসাদের শ্যামাসংগীত শুনতে শুনতে রঘু দেখেন হাঁড়িকাঠে রামপ্রসাদের পরিবর্তে মায়ের মুখ! কালীসাধক রঘু ডাকাত সঙ্গে সঙ্গে বলি বন্ধ করে রামপ্রসাদের সেবার বন্দোবস্ত করেন। পরদিন রামপ্রসাদকে নৌকাযোগে বাড়িতেও পৌঁছে দেন। এর পরই নাকি রঘু ডাকাত নিজের জীবন দর্শন বদলে ফেলেন। মায়ের পুজোতেও বন্ধ হয়ে যায় নরবলি। তবে আজও পোড়া ল্যাটা মাছের ভোগ দেওয়া হয় মাকে।

১৯৯৮ সালে এই মন্দিরে ভয়াবহ ডাকাতি ঘটে। পুরনো মায়ের মূর্তি ভেঙে যায়। সেই সময় নতুন করে মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেই দেবী মূর্তিই এখনও পুজো হচ্ছে। মন্দিরের সেবাইত সুমন চক্রবর্তী জানান, “কালীপুজোর দিন সারাদিন ধরেই পুজো হয় ঠিকই তবে মূল পুজো শুরু হয় রাত ১১টার পর। মায়ের ভোগে আজও দেওয়া হয় পোড়া ল্যাটা মাছ। এছাড়াও খিচুড়ি, পায়েস, পাঁচরকম ভাজা তো রয়েইছে।” পুজোয় নরবলির প্রথা বন্ধ হলেও ছাগবলি এখনও হয়। স্থানীয় বাসিন্দা কার্তিক ভৌমিক জানান, “এখনও কালীপুজোর রাতে প্রথা মেনে মশাল জ্বেলেই বলি দেওয়া হয়। হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয় ওই রাতে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement