শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সিকিম বিপর্যয়ের ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম নদী তিস্তা। এবার সেই বিপর্যয়ের আঁচ লাগল তিস্তা পাড়ের দেবী চৌধুরানির কালীপুজোয়। তন্ত্রমতে পূজিতা দেবী চৌধুরানির কালীর ভোগের থালায় সাজানো থাকে শোল ও বোয়াল মাছ। ৩১২ বছরের প্রাচীন পুজোয় এই প্রথমবার ভোগ নিবেদন হবে অন্য নদীর মাছ দিয়ে। তিস্তার বদলে শোল, বোয়াল মাছ আনা হবে অন্য নদী থেকে। তিস্তার জলদূষণের কারণে ভক্তরা আপত্তি তোলায় এই সিদ্ধান্ত বলে জানান মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার।
কথিত আছে, শোল মাছ নাকি নিজেও পছন্দ করতেন দেবী চৌধুরানি। আর তিস্তা নদীর বোয়াল মাছও ছিল তার পছন্দের তালিকায়। দেবী চৌধুরানি উপন্যাসে প্রফুল্ল অর্থাৎ দেবী চৌধুরানির শোল মাছ ধরার কথা উল্লেখ করেছেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দেবী চৌধুরানির পছন্দের সেই শোল, বোয়াল মাছ দিয়ে আজও ভোগ নিবেদন হয় জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ের দেবী চৌধুরানির শ্মশান কালীর মন্দিরে। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন গোশালা মোড়ের দেবী চৌধুরানি মন্দিরের প্রথম পুরোহিত ছিলেন ভবানী পাঠক। তার পর এই মন্দিরের পুরোহিতের তালিকায় রয়েছেন নয়ন কাপালিক। ১৮৯০ সালে নরবলি দেওয়ার অভিয়োগে নয়ন কাপালিকের প্রাণদণ্ড হয়। সেই থেকেই এই মন্দিরে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি প্রথা। তবে কালীপুজোর রাতে আজও পাঁঠা বলি হয়ে আসছে এই মন্দিরে।
প্রাচীন বট, পাকুড়ে ঘেরা মন্দির। নিস্তব্ধতায় ঘেরা চারপাশ। দিনের বেলায় একা ঘুরলে ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে শরীর। কথিত আছে, এই মন্দিরে শ্মশান কালী মায়ের পুজো দিয়ে অভিযানে বেরতেন দেবী চৌধুরানি। সঙ্গী ভবানী পাঠক। আজ এই মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সুভাষ চৌধুরী। জানান, নিত্য পুজোর পাশাপাশি কালী পুজোর রাতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেখানে ডাল, ভাত, তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজার পাশাপাশি দেবী চৌধুরানির প্রিয় শোল ও বোয়াল মাছের ভোগ দেওয়া হয়। এবার ভোগের পাতের সেই শোল, বোয়ালে আপত্তি তুলেছেন দেবী চৌধুরানি কালী মন্দিরে আসা ভক্তরা। কারণ, তিস্তার জলদূষণ।
গত ৪ অক্টোবর সিকিম পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় তিস্তায়। ভেসে আসে প্রচুর মৃতদেহ। ভেসে আসে সেনা বাহিনীর ব্যবহৃত যুদ্ধ সরঞ্জাম। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে হঠাৎ করে তিস্তায় মাছের মড়ক লাগে। সব মিলিয়ে ভক্তদের আপত্তি জোরদার হওয়ায় অন্য নদীর শোল, বোয়ালে মা কালীকে ভোগ নিবেদনের সিদ্ধান্ত নেন দেবী চৌধুরানি মন্দির কর্তৃপক্ষ। কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার জানান, তিস্তা ছাড়াও পাঙ্গা, করলা, জর্দা, জলঢাকা নদীতে শোল, বোয়াল মাছ পাওয়া যায়। প্রতি বছর যাঁরা পুজোয় মাছের জোগান দেন, তাঁদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অন্য নদীর মাছ জোগাড় করে মন্দিরে পুজোর জন্য দিয়ে যাবেন।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.