সৌরভ মাজি, বর্ধমান: তাঁরা রোগ নিরাময়কারী। শরীরে অসুখ বাঁধলে, তাঁদেরই শরণাপন্ন হন আমজনতা। অথচ হাজারও কাজের চাপে তাঁদের নিজেদেরও তো ক্লান্তি আসে। গ্রাস করে অবসাদ, রোগও। তখন তাঁদের দেখভাল করেন কারা? তখনও তাঁরা নিজেরাই নিজেদের শুশ্রূষাকারী, পরামর্শদাতা। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বোঝা গেছে যে চিকিৎসকদের কথা বলছি। যাঁরা সমাজের পরম বন্ধু হলেও, সম্প্রতি রোগীদের
সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কে বেশ খানিকটা অবনতি হয়েছে। আর সেই ফাঁক পূরণ করতে তৎপর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাই অভিনব কায়দায় সেই বার্তা দিতে নামলেন তাঁরা।
রবিবার, ছুটির দিনের বিকেল। বর্ধমানের জমজমাট এলাকা কার্জন গেট। সেখানেই এক দৃশ্যে চোখে পড়ায় পথচলতি মানুষজন দাঁড়িয়ে পড়লেন। দেখা গেল, একদল যুবক-যুবতী নেচে চলেছেন। একেবারে স্ট্রিট ডান্স। সকলের পরনে একইরকম পোশাক। কালো টি-শার্ট, নীল জিন্স। টি-শার্টের পিছনে লেখা বর্ধমান। দেখে মনে হবে, কোনও নাচের গ্রুপ রাস্তায় নেমেছে পারফর্ম করতে। আর এখানেই ভুল ভাঙল দর্শকদের। জানা গেল, কার্জন গেটে পুরো উদ্যমে নাচতে থাকা তরুণ-তরুণীরা আসলে জুনিয়র ডাক্তার। আপন মনে নেচেই চলেছেন।
বিকেলটা তাঁরা এভাবে কাটালেন। আর তাঁদের দেখে মনপ্রাণ নেচে উঠল অনেকেরই।
কিন্তু কেন জুনিয়র ডাক্তাররা হঠাৎ ল্যাব, আউটডোর ছেড়ে কেন রাস্তায় নেমে নাচে মাতলেন? আসলে এক ঢিলে তাঁরা বেশ কয়েকটি পাখি মারতে চেয়েছিলেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এবার সূবর্ণ জয়ন্তী। সেই উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
তার একটা মহড়া হয়ে গেল রবিবার বিকেলে। এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘আমরা সকলকে আনন্দ দিতে এবং নিজেরাই আনন্দে থাকতে চাই। নাচ দেখে যেমন সবাই আনন্দ পাচ্ছেন, সারা বছর যেন তেমন আনন্দই দিতে পারি, সেটাই আমাদের ইচ্ছা।’ কেউ আবার বলছেন, এটা ফিটনেস মন্ত্র।সারাদিনের কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে সকলের মাঝে নেমে নাচ। এটা যেমন তাঁদের জন্য স্ট্রেস রিলিফের কাজ করে, তেমনই আমজনতার কাছেও তাঁদের বার্তা, এভাবে আপন মনে নাচগান ফিট থাকুন, আনন্দে বাঁচুন।
তবে এসবের বাইরে গিয়ে এই নাচের উদ্দেশ্য আরও খানিকটা বড়। রোগী-জুনিয়র ডাক্তারের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি। মাস দুই আগে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে রোগীর পরিবারের হাতেই গুরুতর প্রহৃত হয়েছিলেন এক জুনিয়র ডাক্তার। পালটায় জুনিয়র ডাক্তাররাও মারমুখী হয়ে পড়েন। সেই ঘটনার উত্তাপ ছড়িয়েছিল গোটা রাজ্যেই। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীকে আসরে নামতে হয়েছে। সেই থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রোগীদের সম্পর্কটা বেশ তিক্ত হয়েছিল। ভরসাও হারিয়েছিলেন অনেকে। সেই ফাঁক পূরণ করতেই এমন অভিনব ভাবনা বর্ধমানের নব প্রজন্মের চিকিৎসকদের। এভাবেই তাঁরা হাত বাড়িয়ে দিতে চান। বোঝাতে চান, আমজনতার একজন হয়েই তাঁদের পাশেই আছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.