সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সুন্দরবন থেকে পাহাড়। জঙ্গলমহল থেকে বিধাননগর উপনগরী। কখনও আইনশৃঙ্খলা, কখনও আবার জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করা। রাজ্য পুলিশে প্রায় সব কাজেই দক্ষ জঙ্গলমহলের এই জুনিয়র কনস্টেবল নিয়োগের প্রায় সাত বছর পরেও পদোন্নতি না হওয়ায় ক্ষোভের চোরাস্রোত বইছে বাহিনীর অন্দরেই।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের এই ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে সোশ্যাল সাইটেও৷ পদোন্নতির বিষয়ে জুনিয়র কনস্টেবলরা ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠিও লিখেছেন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই তাঁরা এই বিষয়ে ‘দিদিকে বলো’ ওয়েবসাইটেও নিজেদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন৷ সোশ্যাল সাইট জুড়ে একাধিক পোস্টে তাঁরা লিখেছেন, ‘চাই না আমরা টাকাপয়সা, চাই না আমরা গাড়ি/ শুধু বন্ধ হোক আমাদের ওই ছশো কিমি পাড়ি৷’ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া এনিয়ে বলছেন, ‘জুনিয়র কনস্টেবলের পদোন্নতির বিষয়ে পুলিশ ডাইরেক্টরেটের কাছ থেকে ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে।’
রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদা মাও উপদ্রুত জঙ্গলমহলে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে জুনিয়র কনস্টেবল নামে রাজ্য পুলিশের নতুন পদ তৈরি করে দেন৷ পুলিশ মন্ত্রী হিসেবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তিন দফায় রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলা – পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূমে ৫৩১২ জন যুবক,যুবতীকে এই পদে নিয়োগ করা হয়। তবে এখনও ১৬৮টি পদ খালি রয়েছে। রাজ্য পুলিশের ‘পাঁচ আইন’ মেনেই এই বাহিনীর নিয়োগ হয়। কিন্তু এখনও এই স্তরের পুলিশ কর্মীদের কোনও পদোন্নতি না হওয়ায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উসকে উঠছে। এই বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা, মাওবাদী দমনে ভালভাবে কাজ করার পাশাপাশি পুলিশ আধিকারিক, আমলা, বিধায়ক, মন্ত্রী, বিচারকদের দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করছেন। সেইসঙ্গে মাওদমনে রাজ্যের প্রশিক্ষিত বাহিনী ‘কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্স’–এর কাছ থেকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে জঙ্গল যুদ্ধের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন এই জুনিয়র কনস্টেবলদের অনেকেই৷ এই বাহিনী থেকে তাঁদের ব়্যাফ, কমান্ডো বিভাগে নিয়োগ করেছে রাজ্য পুলিশ। বিভিন্ন থানা, পুলিশ শিবির-সহ ডেপুটেশনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কার্যত কনস্টেবলের মতোই কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনভাবেই তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না বলে অভিযোগ। কর্মস্থল হিসেবে তাঁদের কোন স্থায়ী ঠিকানাও নেই।
গত ২৫ জুলাই রাজ্যের তরফে পুলিশ কর্তাদের কাছে নির্দেশ আসে, বিভিন্ন থানা এলাকায় ১ জানুয়ারি, ২০১৯ পর্যন্ত যে সব কনস্টেবলের ছ’বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদেরকে এএসআই পদে পদোন্নতির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বনমহলের এই বাহিনীর দক্ষতার কথা বিচার করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন গত লোকসভা ভোটে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ভোট ডিউটি করতে পাঠায়। তবে পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল অ্যাক্ট অনুযায়ী, এই জু্নিয়র কনস্টেবল পদের কোনও উল্লেখ নেই বলে তাঁরা সোশ্যাল সাইটে ব্যাপকভাবে সরব হয়েছেন। ফেসবুক ওয়ালে তাঁরা লিখেছেন, সকলে যাতে তাঁদের নিজেদের জেলায় কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক৷ তাঁদের এই দাবি কি পূরণ হবে? তারই অপেক্ষায় জুনিয়র কনস্টেবলের দল৷
এদিকে, জুয়ার ঠেকে হানা দিতে গিয়ে পুরুলিয়াতে আক্রান্ত হল পুলিশ। বুধবার রাতে ঝালদা থানার ইচাগ গ্রামের কচাখুলি এলাকায় জুয়ার ঠেকে আচমকা হানা দিয়ে হামলার মুখে পড়েন তিনজন পুলিশ কর্মী৷ তাঁদের মধ্যে এক কনস্টেবলের অবস্থা গুরুতর, তাঁর নাম তপন দাস। তিনি ঝালদা থানায় কর্মরত। ওই দিন রাতে স্থানীয়দের বিক্ষোভে আক্রান্ত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঝালদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরতি করা হয়৷ পরে অবস্থার অবনতি হলে, দেবেন মাহাতো পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ আজ তিনি ছুটি পেয়েছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.